Updates

বরাক থেকে রাজ্যসভায় ‘সিলেটি’ প্রতিনিধিত্ব নেই কেন, উঠছে প্রশ্ন

পিএন সি: সোনাপুর(কাছাড়,) – ২০০৮ ইংরেজীর পর থেকে বরাক উপত্যকার আর কাউকে রাজ্যসভার সিলেটি কৌটার আসন অলংকৃত করতে দেখা যাচ্ছে না কেনো? অনেকেই বলছেন হয় এই আসন বিলুপ্ত হয়ে গেছে আর না হয় বরাক উপত্যকায় বোধহয় উপযুক্ত সিলেটি মূলের কোনো হিন্দু বাঙালি নেই। স্বভাবতই প্রশ্ন উত্থাপন হবেই , প্রায় ১৬ বছরের অধিক সময় ধরে বরাক উপত্যকা কে ব্রাত্য করে সংবিধান প্রদত্ত সেই আসনটি কোন রাজনৈতিক দলের নেতা প্রতিনিধিত্ব করছেন তা রহস্যের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।

এখানে উল্লেখ্য যে ১৯৪৭ ইং সালের ১৫ ই আগস্ট পর্যন্ত সিলেট জেলা আসামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলো। ১৯৪৬ ইং সালে যখন ভারতের সংবিধানের , খসড়া প্রস্তুত করা হয় তখন সিলেট জেলা বাদ পড়ে যায়,সেই মতো করেই ১৯৫০ ইং সালের ২৬ শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়।

এদিকে অবিভক্ত সিলেটের তিন জন সদস্য কে লর্ড মাউন্ট বেটেন অযৌক্তিক ভাবে পাকিস্তানের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে পাকিস্তানের সঙ্গে সেটে দেওয়ার পর বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় -ফলে গন ভোটের প্রয়োজন হয় তখন সিলেটের হিন্দু নাগরিক গণ ভারতের পক্ষে ভোট দিয়ে ভারতের সংবিধানের এক্তিয়ারে চলে আসে এবং আসামের অন্তর্ভুক্ত হয়।

সেই সময় আসামে রাজ্যসভার মোট আসন সংখ্যা ছিল ৬ , এদিকে সংবিধান প্রণয়ন কালে সিলেট জেলার হিন্দু বাঙালি জনগোষ্ঠী সংবিধানের এক্তিয়ারে আসতে অসমর্থ হন,তাই ১৯৫৭ ইং সালে সপ্তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে আসাম রাজ্যের ৬+১ মোট ৭ টি রাজ্য সভার আসন সৃষ্টি করা হয় শুধু বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠীর জন্য। সেই মতো ১৯৫৭ ইং থেকে -১৯৬০ এবং ,১৯৬০ ইং থেকে -১৯৬৬ ইং পর্যন্ত এই সিলেটি কৌটার আসন থেকে রাজ্য সভায় প্রতিনিধিত্ব করেন সুরেশ দেব , এরপর ১৯৬৬ ইং থেকে ১৯৭২ ইং পর্যন্ত মহীতোষ পুরকায়স্থ,১৯৭২ ইং থেকে ১৯৭৮ ইং পর্যন্ত নৃপতি রঞ্জন চৌধুরী,১৯৮৪ ইং থেকে ১৯৯০ ইং পর্যন্ত কমলেন্দু ভট্টাচার্য এবং ১৯৯৬ ইং থেকে ২০০২ ইং এবং ২০০২ ইং থেকে ২০০৮ ইং পর্যন্ত দুই দুবার এই সংবিধান প্রদত্ত হিন্দু বাঙালির প্রতিনিধিত্ব করেন কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য । বরাক উপত্যকার তিন জেলার জনসাধারণের সমস্যা নিরসনে তাঁরা রাজ্য সভায় প্রস্তাব তুলেছেন বলে দেখা গেছে।

এখানে উল্লেখ্য যে সিলেট বিভাজনের খেসারত দিতে দিতে আজ সিলেটি মূলের হিন্দু বাঙালির পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে প্রায়। বিশেষ করে আসামের হিন্দু বাঙালি যারা সিলেট বিভাজনের স্বীকার তারা প্রতিনিয়ত হেনস্তার সম্মূখীন হচ্ছেন এবং অদূর ভবিষ্যতে যখন ছয় নং ধারা তার স্বমহিমায় ফিরবে তখন তো আর কথাই নেই বললেই চলে। এমতাবস্থায় রাজ্য সভায় সিলেটি মূলের হিন্দু বাঙালির প্রতিনিধির আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। ২০০৮ ইং সালের পূর্বের অবস্থা আর পরবর্তী অবস্থার মধ্যে অনেক ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর এই শূণ্যতার সুযোগ কে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে বরাক উপত্যকার মানুষের দাবি দাওয়া কে নূন্যতম মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না বলে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে বরাক উপত্যকার তিন জেলার প্রতিনিধিত্ব করা রাজ্য সভার আসন বিলুপ্তির অবসান ঘটিয়ে পূর্বের মতো এই উপত্যকা থেকে সিলেটি মূলের হিন্দু বাঙালির সদস্য নির্বাচিত করার জন্য পূর্ব শ্রীহট্ট সম্মিলনীর তরফে সর্ব ডক্টর ইরেশ রঞ্জন ভট্টাচার্য অংশু মান মজুমদার, সন্দীপ নাথ, মধুচন্দ্র ভট্টাচার্য,কমল চৌধুরী সুদীপ শর্মা চৌধুরী প্রমুখ বিগত ২০১৯ ইং সালের ২০ শে মার্চ ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দুই মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে সর্বানন্দ সানোয়াল ও হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং রাম মাধবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।

কিন্তু এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এই রাজ্যসভা আসনের জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা জানা যায়নি। এদিকে এই সিলেটি মূলের হিন্দু বাঙালির স্বাভিমান স্বরূপ রাজ্যসভার আসন বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কি না তা জানতে এই প্রতিবেদকের একটি প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি মেমোরিয়াল স্বার্থ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি হারাণ দে বলেন আপনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন ।তিনি বলেন এই বিষয়টি বরাক উপত্যকার প্রতিটি দল সংগঠনের কর্মকর্তা দের নজরে আনবেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানাবেন।

Show More

Related Articles

Back to top button