সবার স্বতঃস্ফুর্ত যোগদানে সফল ‘বরাক সংহতি উত্সব ২০২৩’
শিলচর : গত ১৪ যে, রবিবার পূর্বাচল জয়েন্ট এ্যাকশন কমিটি আয়োজিত ‘বরাক সংহতি উত্সব’,২০২৩ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে পালিত হল , অসমের শিলচর গান্ধী ভবনে।
এদিন প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন সংস্থার অন্যতম উপদেষ্টা অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য, লেখক, সাংবাদিক অতীন দাস, উপত্যকার সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব প্রদীপ দত্তরায় ও শিক্ষক তথা সমাজকর্মী আইনুল হক মজুমদার।
এছাড়া মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পূর্বাচল জয়েন্ট এ্যাকশন কমিটির সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ। প্রারম্ভিক বক্তব্যে সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ বলেন বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের অন্যতম দৃষ্টান্ত বরাক উপত্যকা,বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নিরিখে যাকে ‘ মিনি ভারত ‘ বলা যেতে পারে। এই উত্সব সবার মিলনের উত্সব।
এরপর প্রদীপ দত্তরায় তাঁর বক্তব্যে বরাক উপত্যকার প্রতি বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও সেজন্য সংহতির বিকল্প নেই বলে মত ব্যক্ত করেন। আইনুল হক মজুমদার তাঁর বক্তব্যে বরাকে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের দীর্ঘ ঐতিহ্যের উল্লেখ করে বলেন ইদানীং যেভাবে ধর্মীয় এবং ভাষিক বিভাজনের রাজনৈতিক চর্চা চলছে এর বিরুদ্ধে একমাত্র প্রতিরোধ এই ধরনের সংহতির চর্চার মধ্য দিয়ে সূচিত হতে পারে।
তিনি বলেন সমাজের প্রত্যেক মানুষই একে অন্যের জন্য প্রয়োজনীয়। এই উত্সবের সেই বোধ সঞ্চারিত হোক। বিশিষ্ট সাংবাদিক অতীন দাস বলেন মানুষ যদি নিজেকে ঈশ্বরের সন্তান বলে মনে করে তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে মানুষে মানুষে ভালবাসা ,সম্প্রীতি বজায় থাকলে তাঁদের পিতা প্রীত হন, অন্যথা তিনি বিমর্ষ হন।
আত্মীয় সভার পরস্পরা নিয়ে এগিয়ে যাবে এই উত্সব।প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন পূর্বাচল জয়েন্ট এ্যাকশন কমিটি নামটি ইঙ্গিতবাহী। তিনি বলেন এই নামটির সাথে বৃহত্তর বরাক বাসীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কোন না কোন ভাবে জড়িয়ে আছে।
তপোধীর বাবু বলেন যে এই মুহূর্তে খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই বরাকের মানুষ।জাতি,ভাষা,ধর্মের নামে লড়াই চারিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এর প্রতিরোধ করতে হলে সব জনগোষ্ঠীর মানুষকে এক হতে হবে, এছাড়া বিকল্প নেই। তিনি বলেন বরাকের ইতিহাস, ভুগোল, সংস্কৃতি সবকিছু অনেকটাই ভেঙেছে, প্রয়োজন মেরামতের ।
এই উত্সবের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়াই শুরু হল। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে পরিবেশিত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা। এতে অংশ নেন নাগা,নেপালী, মনিপুরী, বিষ্ণুপ্রিয়া,কোচ রাজবংশী ইত্যাদি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংগঠন।
পরিবেশিত হয় বিহু,ধামাইল নৃত্য ও গাজি সংস্থার অনুষ্ঠান। বিকেলে আয়োজিত ‘আধিপত্যবাদের প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ বহুভাষিক বরাক উপত্যকার ভূমিকা ‘ এই শিরোনামে আয়োজিত মত বিনিময় সভার সঞ্চালক ছিলেন কৃশানু ভট্টাচার্য। এতে অংশ নেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক শিক্ষক সঞ্জীব দেবলস্কর, আইনজীবী তথা সমাজকর্মী ইমাদ উদ্দিন বুলবুল,এম শান্তি কুমার সিং,ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সমাজের পক্ষ থেকে মনোরঞ্জন সিনহা।
এছাড়া মঞ্চে ছিলেন সংস্থার উপদেষ্টা প্রদীপ দত্তরায় ও সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য। সঞ্জীব দেবলস্কর তাঁর বক্তব্যে পূর্ববর্তী পূর্বাচলের দাবিতে আন্দোলনের উল্লেখ করে বলেন যে তাঁর স্বর্গীয় পিতা সেই স্মারকলিপিতে অন্যতম স্বাক্ষরকারী ছিলেন।
তিনি বলেন বঞ্চনা, বৈষম্যের শিকার এই উপত্যকার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আইনজীবী ইমাদ উদ্দিন বুলবুল বলেন যে মানব ইতিহাসে আধিপত্যবাদ যেমন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তেমনি তার প্রতিরোধও বারবার সংগঠিত হয়েছে।
যদি তা না করা হয় তবে আধিপত্যবাদ ঘাড়ে চেপে বসে। বরাকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এছাড়া বাকি অতিথিরাও এতে প্রাসঙ্গিক মতামত ব্যক্ত করেন, মতামত নেওয়া হয় দর্শকাসন থেকেও। সন্ধ্যার দ্বিতীয় পর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে এদিন করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ্য দে পুরকায়স্থ তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংহতি এবং ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে এই ধরনের প্রয়াস নেবার জন্য উদ্যোক্তা সংগঠনকে সাধুবাদ জানান।
রাতের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মালায় এদিন অংশ নেন উপত্যাকার প্রথম সারির ক্লাব,সংগঠন সমূহ। এদিনের সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যাবস্থাপনায় ছিলেন ভাস্কর দাস ও গোরা চক্রবর্তী। পূর্বাচল জয়েন্ট এ্যাকশন কমিটির পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন সদস্য হৃষীকেশ দে।