Barak ValleyAssamNorth-East

“সুশাসন সপ্তাহ প্রশাসন গাঁও কি ওর” ২০২২ উপলক্ষে করিমগঞ্জে প্রশাসনিক কর্মশালা ও সাফাই অভিযান

জনসংযোগ, করিমগঞ্জ, ২৩ ডিসেম্বর : কেন্দ্র সরকারের পার্সোন্যাল, পাবলিক গ্রিভান্স অ্যান্ড পেনসন্স মন্ত্রণালয়ের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিফর্ম অ্যান্ড পাবলিক গ্রিভান্স বিভাগের ব্যবস্থাপনায় এবং রাজ্য সরকারের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিফর্ম, ট্রেনিং, পেনশন অ্যান্ড পাবলিক গ্রিভান্স বিভাগের সহযোগিতায় ১৯ থেকে ২৫ ডিসেম্বর সমগ্র দেশ এবং রাজ্যের প্রতিটি জেলার সাথে করিমগঞ্জেও গুড গর্ভান্যান্স উইক বা “সুশাসন সপ্তাহ প্রশাসন গাঁও কি ওর” ২০২২ পালন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে জেলার তৃণমূল স্তরে জনগণের মধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার থেকে প্রদান করা বিভিন্ন প্রকল্প ও সেবা সমূহ ই সার্ভিসের মাধ্যমে সহজতরভাবে প্রদান করার পদ্ধতিগুলি নিয়ে শুক্রবার করিমগঞ্জের জেলাশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

এতে ওইদিন করিমগঞ্জের ডিডিসি বিক্রম দেব শর্মার পৌরহিত্যে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় প্রথমে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার অধীনে ই অফিসের পদ্ধতিগুলি নিয়ে একটি ভিডিও প্রদর্শন করে এর সুবিধা যেমন ভার্চুয়ালি অফিসের দৈনন্দিন কাজ যেকোন স্থান থেকে যেকোন সময় চালিয়ে যাওয়ার সুবিধা, জনগণকে তাৎক্ষণিক ও স্বচ্ছতা সহকারে সেবা প্রদান, প্রতিটি কাজে নজরদারি রাখার সুবিধা, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ফাইলের বোঝা কমানো ও অন্যান্য সুবিধা গুলি তুলে ধরা হয়।

এতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ থেকে জেলায় চলতে থাকা জল জীবন মিশনের অধীনে প্রতিটি ঘরে নলবাহী বিশুদ্ধ জল সরবরাহ এবং স্বচ্ছ ভারত মিশনের অধীনের সেবাগুলি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন জন স্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের সহকারী নির্বাহী বাস্তুকার অজয় পুরকায়স্থ। এতে তিনি জানান যে ২০২১ ২২ বছরে করিমগঞ্জ জেলায় এই মিশনের অধীনে ১ লক্ষ ৪৬ হাজার গৃহস্তকে নলের মাধ্যমে বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। যার ফলে করিমগঞ্জ জেলা সমগ্র রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেছে এবং শতাংশ হিসেবে ১৫০ শতাংশের সফলতা অর্জন করেছে।

তিনি জানান বিভাগের মূখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে জলের বিশুদ্ধতা বজায় রেখে জনগণকে সেবা প্রদান। এতে তিনি জল সরবরাহ প্রকল্প, পাইপলাইন ইত্যাদির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গ্রামোন্নয়ন বিভাগের সাথে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের মউ চুক্তি সাক্ষরিত করা হয়েছে যাতে গ্রামীণ এলাকায় পঞ্চায়েত স্তরে এর রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হয়। তিনি এই অত্যাবশ্যকীয় সেবাকে সচল রাখতে জনগণের একান্ত সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি আরও জানান যে জেলায় করিমগঞ্জ পাথারকান্দি এবং বদরপুরে তিনটি জলের গুণগতমান পরীক্ষা করার পরীক্ষাগার রয়েছে যার মাধ্যমে নিয়মিত জলের বিশুদ্ধতার মান পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কয়েকটি ছোট আকারের জল সরবরাহ প্রকল্পগুলি সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে চালানোরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের সেবাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের করিমগঞ্জের ডিস্ট্রিক ডাটা ম্যানেজার কল্যাণ পুরকায়স্থ জানান যে জনগণকে চিকিৎসার সুবিধা সহজতরভাবে প্রদান করতে হাসপাতালের বহির্বিভাগগুলিতে কিউবার কোড স্ক্যান করে মোবাইলে ফোনে মেসেজ গ্রহণ করে সহজ ভাবে রেজিস্ট্রেশন ও চিকিৎসা পাওয়ার ব্যবস্থা দেশে চালু হয়েছে।

পাশাপাশি আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশনের অধীনে আয়ুষ্মান ভারত হেল্থকার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর জন্য জেলার হাসপাতালগুলির বহির্বিভাগের সাথে আয়ুষ্মান ভারত হেল্থ আইডি কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এতে তিনি জানান করিমগঞ্জ জেলায় চলতি ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ২ লক্ষ ৪১ হাজার ৬৬৫টি আয়ুষ্মান ভারত হেল্থ আইডি কার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে যার স্থান সমগ্র রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয়।

এদিনের কর্মশালায় অরুণোদয় ও বিদ্যাঞ্জলি প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত এডিসি বিপুল দাস জানান যে রাজ্য সরকারের অন্যতম সেবা গুলির মধ্যে অরুণোদয় ২.০ সেবার মাধ্যমে জেলায় অসহায় মহিলাদের ১২৫০ টাকা প্রতি মাসে প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এতে ২০২৩ সালের জন্য ১ লক্ষ ১০ হাজার হিতাধিকারির কোটা ধার্য করা হয়েছে।

পাশাপাশি দিব্যাংগ, হিজরা, দীনদয়াল দিব্যাংগ পেনশন ও ইন্দিরা মিরি বিধবা পেনশনকে এই প্রকল্পের আওতায় এনে সরাসরি হিতাধিকারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এদিকে তিনি বিদ্যাঞ্জলি ২.০ এর অধীনে সরকারি বিদ্যালয়গুলির উন্নীতকরণের জন্য বিদ্যালয়ে জনগণ থেকে স্বেচ্ছায় দান এবং সেবা প্রদান, প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মাণ, বাদ পড়া স্কুল ছাত্র ছাত্রীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে তার বর্ণনা করেন।

এদিকে মিশন বসুন্ধরা ২.০ এর মাধ্যমে ই পরিষেবায় জমির নামজারি, পাট্টা প্রদান ইত্যাদি বিভিন্ন সেবা গুলি নিয়ে আলোচনা করেন রাজস্ব শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এডিসি জেমস আইন্ড। তিনি জানান যে বসুন্ধরা দ্বিতীয় পর্যায়ে চলতি মাস পর্যন্ত জেলায় বিভিন্ন সেবা পাওয়ার জন্য ৭০৩টি আবেদন জমা পড়েছে।

এছাড়া এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে করিমগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ওয়েবসাইট karimganj.assam.gov.in এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন করিমগঞ্জের ডিডিসি বিক্রম দেব শর্মা।

এদিনের কর্মশালায় এডিসি রিন্টু বড়ো, ডিসি অফিসের ফাইনান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট অফিসার দেবজ্যোতি শর্মা, জেলার বিভাগীয় কার্যালয় প্রধান ও কর্মচারীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। সবশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এডিসি রিন্টু বড়ো।

এদিকে এই সপ্তাহ পালনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শুক্রবার সকাল ন’টায় করিমগঞ্জের জেলাশাসক কার্যালয়ে প্রাঙ্গণে এক সাফাই অভিযান চালানো হয়। এই সাফাই অভিযানে ডিডিসি বিক্রম দেব শর্মা, এডিসি রিন্টু বড়ো ও জেলাশাসক কার্যালয়ের বিভিন্ন শাখার আধিকারিক ও কর্মচারীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।

Show More

Related Articles

Back to top button