Barak Valley

করিমগঞ্জের বৈঠাখাল কালীমন্দিরে ভক্তকুলের উপচে পড়া ভিড়, পুজো দিলেন বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু

পাথারকান্দি : কালীপুজোকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ভক্ত সমাবেশে মুখরিত হয়ে পড়েছিল করিমগঞ্জ জেলার অন্তর্গত পাথারকান্দি বিধানসভা বৈঠাখালের জাগ্রত কালিমাতার মন্দির।

এ উপলক্ষ্যে এলাকার বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল মন্দিরে এসে মায়ের পুজো দিয়েছেন। পাশাপাশি মন্দিরের প্রধান বাবাজি ভীমসেন পাটিশর্মার সঙ্গে মন্দিরের উন্নয়নকল্পে বেশ কিছুক্ষণ আলাপ শেষে তাঁর আশীর্বাদ নেন বিধায়ক। পরে তিনি শ্যামা মায়ের কাছে বৃহত্তর এলাকাবাসীর সুখ-শান্তি সমৃদ্ধিও কামনা করেন।

জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও শক্তির আরাধ্যা দেবী কালীমাতার পুজোকে ঘিরে নতুনভাবে সেজে উঠেছে পাথারকান্দি বৈঠাখালের জাগ্রত কালিমাতার মন্দির। রবিবার সকাল নয়টা থেকে মায়ের মূল পীঠস্থানে ওঠার মূল গেট খুলে দেওয়া হয়। দর্শনার্থীরা পাহাড়ের উপর গিয়ে ভগবতী দেবীর পুজো দিয়ে নীচে নেমে মন্দিরে মাতৃ দর্শন করে পুজো দেন। এর আগে সকাল থেকেই জোর কদমে চলে পুজোর প্রস্তুতি।

শ্যামা মায়ের আরাধনায় যাতে কোনও ত্রুটি না হয়, তার জন্য প্রস্তুতি ছিল ব্যাপক। বরাক উপত্যকা এবং সংলগ্ন ত্রিপুরার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মায়ের অজস্র ভক্ত ভিড় জমিয়েছেন মন্দিরে। তবে এবার ঠাকুর দর্শনের স্থানে পাকা সিড়ি হওয়ায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করছে মন্দির পরিচালন কমিটি।

এ প্রসঙ্গে মন্দির পরিচালন কমিটির সম্পাদক সেবক সিনহা জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে যখন গাড়ির সংখ্যা কম ছিল তখন স্থানীয় লোকজন পায়ে হেঁটে বাজারহাট করতেন। এমন-কি স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদেরও পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হত। তখন এই এলাকায় জনবসতি খুবই কম ছিল। বৈঠাখাল বাজার পেরিয়ে গির্জাঘরে যাওয়ার আগে সড়কের পূর্বদিকে একটি বিশাল আকৃতির পাহাড় ছিল।

পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে ধাবমান অসম ও ত্রিপুরার জীবনরেখা বলে পরিচিত ৮ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে যখন লোকজন যাতায়াত করতেন, তখন এই পাহাড় থেকে প্রায় সময় একটা বিকট আওয়াজ শুনতে পেতেন লোকজন। পাহাড়ের ঠিক নীচে জাতীয় সড়কের পাশে টিন দিয়ে একটি ছোট মন্দির বানানো ছিল। লোকজন আসা-যাওয়া করতে সেখানে ভক্তি প্রণাম নিবেদন করতেন।

পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে সুদূর হিমালয় থেকে এক সিদ্ধপুরুষ এই পাহাড়ের ওপর গভীর জঙ্গলে এসে ধ্যান শুরু করেন। কিছুদিন পর জানা যায় তাঁর নাম ভীমসেন পাটিশর্মা। তিনি হিমালয় পাহাড়ে ধর্মীয় শিক্ষা সমাপ্ত করে অসমে আসেন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। এছাড়া আরও জানা গেছে, মায়ের ডাকে বৈঠাখালের এই পাহাড়ে তিনি আসেন।

অনেক সময় দেখা গিয়েছে, মশা, পোকামাকড়ের কামড়ে রক্তাক্ত অবস্থায়ও তিনি ধ্যানমগ্ন থাকতেন। সব থেকে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ওই পাহাড়ে আগে মানুষ উঠতে ভয় পেতেন। এক সময় এই পাহাড়ে অনেক জীবজন্তুর পাশাপাশি বাঘও ছিল। গবাদি পশু গেলে আর ফিরে আসার কোনও আশঙ্কা ছিল না।

এই সিদ্ধপুরুষ নির্ভয়ে সেখানে বসে ধ্যান করতেন। অনেকদিন ধ্যান করার পর তিনি স্বপ্নাদেশে এই জায়গায় কালী মায়ের মন্দির নির্মাণ করার আদেশ পান। ঠিক পরের দিন থেকেই এখানে মন্দির নির্মাণের কাজ তিনি শুরু করে দেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনগণ সহ অনেক ভক্ত মনোযোগ দিয়ে গুরুত্ব সহকারে যোগদান করেন মন্দির নির্মাণের কাজে।

Show More

Related Articles

Back to top button