Barak Valley

ডিলিমিটেশনের খসড়া বাতিলের দাবিতে CPM-র নাগরিক সভা

করিমগঞ্জ : বরাক উপত্যকার স্বার্থবিরোধী ডিলিমিটেশনের খসড়া প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার সিপিআই (এম)-এর করিমগঞ্জ স্থানীয় কমিটির ডাকে বিপিনচন্দ্র পাল ভবনে এক নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা থেকে ডিলিমিটেশনের বিরুদ্ধে জেলার সর্বস্তরের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআইএম-এর নেতারা।

উল্লেখ্য, ডিলিমিটেশনের প্রতিবাদে বিগত ২৬ জুন সংগঠিত ধরনা থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেয় সিপিআই (এম)-এর করিমগঞ্জ জেলা কমিটি। ইতিমধ্যে বিগত ৭ জুলাই পাথারকান্দির রবীন্দ্রভবনে প্রথম নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে অনুযায়ী আজ করিমগঞ্জে ছিল দ্বিতীয় নাগরিক সভা।

সঞ্জেন্দু নাথের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত সভার উদ্দেশ্য তুলে ধরতে গিয়ে অন্যতম আহ্বায়ক কালিপদ নাথ বলেন, ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে নিজেদের অশুভ বাসনাকে বাস্তবায়িত করতে রাজ্যের বিজেপি-এজিপি সরকারের চক্রান্তের কথা নাগরিকদের কাছে তুলে ধরার জন্যই জেলার বিভিন্ন স্থানে অনুরূপ নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত করছে সিপিআই (এম)। তিনি বলেন, ২০ জুন প্রস্তাবিত ডিলিমিটেশন খসড়া পেশ করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। ২০২৬-এ যখন সারা দেশে ডিলিমিটেশন হবে, তখন এত হুড়োহুড়ি করে অসমে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ডিলিমিটেশন করানো শাসক দলের ভোট পরিকল্পনার রাজনৈতিক প্রয়োজন ছাড়া কী হতে পারে, প্রশ্ন তুলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, করিমগঞ্জে একটি সহ বরাকে দুটি আসন বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বরাকের প্রতি বিজেপি-এজিপি সরকার শুরু থেকেই বঞ্চনা করছে। ডিলিমিটেশন তার সর্বশেষ জ্বলন্ত উদাহরণ। এই সরকার একদিকে ব্রহ্মপুত্র-বরাকের মানুষের মধ্যে বিভেদের তৈরি করছে, অন্যদিকে বরাকের মানুষকে হিন্দু মুসলমানে ভাগ করে তার রাজনৈতিক অভিসন্ধি চরিতার্থ করতে চাইছে। বরাকের মানুষ দলমত নির্বিশেষে প্রতিবাদে নেমেছেন। কিন্তু বিজেপি আরএসএস আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। পুলিশ আন্দোলনকারীদের মিছিল, মিটিঙে বাধা দিচ্ছে। সামগ্রিক এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেই প্রতিবাদী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

সিপিআই (এম)-এর করিমগঞ্জ জেলা কমিটির সম্পাদক পরিতোষ দাশগুপ্ত বলেনষ ডিলিমিটেশনকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে ভুল করা হবে। বরাক উপত্যকার প্রতি সরকারের বঞ্চনা দীর্ঘদিনের। ফল মাতৃভাষা আন্দোলনে পঞ্চদশ শহিদ। আবার এই ষড়যন্ত্র নতুন করে শুরু হয়েছে। একদিকে বরাক-ব্রহ্মপুত্রে বিভেদ, অন্যদিকে উপত্যকার ভাষিক সংখ্যালঘুদের হিন্দু-মুসলমানে ভাগ করা। ডিলিমিটেশনের বিরুদ্ধে যখন প্রতিবাদ হচ্ছে, তখন বিভিন্ন স্থানে মানুষকে ভাগ করার কাজ চলছে। উপত্যকার মানুষ যখন প্রতিবাদ করছেন, তখন এই উপত্যকার বিজেপির জনপ্রতিনিধি, বিজেপির নেতারা প্রতিবাদ থেকে নিরাপদ দূরত্বে রয়েছেন। এ মুহূর্তে বরাক উপত্যকার মানুষকে শত্রু, মিত্র চিনে নিতে তিনি অনুরোধ জানান।

প্রধান বক্তা নির্মল দে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বরাক ও ব্রহ্মপুত্রের মানুষের মধ্যে বিভেদের কাজ শুরু হয়েছে। ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল, আজও তা চলছে। এবার আক্রমণের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আরএসএস-এর নির্দেশে বিজেপি-এজিপি সরকার নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে তার কাজ করিয়ে নিয়েছে। তার আগে তারা প্রশাসনিকভাবে জেলাগুলিকে ভেঙেছে। নির্বাচন কমিশন ভাঙা জেলাগুলিকে জুড়তে পারবে না। এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয় নয়। তিনি বলেন, মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। দেশি কর্পোরেট মালিক থেকে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীরা চাইছে বিজেপি ক্ষমতায় থাকুক। বেকারত্ব, ক্ষুধায় আমাদের দেশ তলানিতে নামছে। কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি সরকারের সার্বিক জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে মানুষ সংগঠিত হচ্ছেন। সারা দেশে এবং আমাদের রাজ্যেও মানুষ আর বিজেপিকে চাইছেন না। বিজেপি সেটা বুঝে গেছে। তাই অসমে হিমন্ত সরকারের এই ষড়যন্ত্র। একদিকে বরাক উপত্যকা থেকে আসন বিলুপ্ত করে রাজ্যের ভাষিক সংখ্যাগুরুকে সন্তুষ্ট করা, অন্যদিকে বরাক উপত্যকার হিন্দু ভোটকে সংহত করা।

তিনি বলেন, মানুষ ইন্দিরা গান্ধীর স্বৈরতন্ত্রকে রুখে দিয়েছিলেন, মানুষ বিজেপির স্বৈরতন্ত্রকেও রুখবেন। বলেন, কংগ্রেস তাদের আমলে যেটুকু নৈতিকতা দেখিয়েছিল বিজেপি সেটুকুও দেখায় না। তিনি বলেন, ভারতবর্ষের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে মোকাবিলা না করে ডিলিমিটেশনকে মোকাবিলা করা যাবে না। জেলার মানুষ এ মুহূর্তে তাঁদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আন্দোলন চান, ডিলিমিটেশন নিয়ে আন্দোলন চান। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জাতিয়তাবোধ এবং ঐক্যের ভাবধারাকে রক্ষা না করতে পারলে ডিলিমিটেশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে রক্ষা করা এবং এগিয়ে নেওয়া যাবে না। বিজেপি সংবিধান মানছে না, এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে এবার মুখ খুলতে তিনি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে মানুষের রাজনীতি করার জন্য তিনি জেলার রাজনৈতিক দলগুলিকে আহ্বান জানান। তিনি সমস্ত ধরনে বিভেদের শক্তিকে পরাস্ত করে জেলার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষজনকে এই আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। নাগরিকসভায় বক্তব্য পেশ করেছেন সিপিআই-এর জেলা সম্পাদক রাগেন্দ্রচন্দ্র দাস।

Show More

Related Articles

Back to top button