Barak Valley

দাবি আদায়ে শ্রম আধিকারিকের কার্যালয় ঘেরাও, মিছিল করিমগঞ্জে

করিমগঞ্জ : বারো দফা দাবিতে আজ ৩১শে মে ২০২৩ ইং হাতে দাবি সম্বলিত প্লে-কার্ড নিয়ে করিমগঞ্জ জিলা শ্রম আধিকারিকের অফিস ঘেরাও করলো সি আই টি ইউ অন্তর্ভুক্ত কাঠমিস্ত্রী, রাজমিস্ত্রী পেইণ্টার্স ইউনিয়ন। উল্লেখ্য নির্মাণ শ্রমিকদের আইনত: প্রাপ্য সুবিধাগুলি দীর্ঘদিন ধরে আটকে রেখেছে সরকার। ইউনিয়নের দীর্ঘদিন অনেক আবেদন নিবেদনের পরও রাজ্য সরকার এবং শ্রম বিভাগ নির্মাণ শ্রমিকদের বকেয়া আর্থিক প্রাপ্যগুলি মিটিয়ে দিতে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই জিলার ক্ষুব্ধ নির্মাণ শ্রমিকরা প্রাথমিক ভাবে জিলা শ্রম আধিকারিকের অফিস অভিযানের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।

সকাল থেকেই জিলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লাল পতাকা,ফেষ্টুনে সাজানো গাড়ি নিয়ে সংগঠিতভাবে নির্মাণ শ্রমিকরা জিলা সদরে আসতে শুরু করেন। সুদুর নিভিয়া, চেরাগী, শনবিল, ফাকুয়া, আনন্দপুর গামারিয়া, বাজারিছড়া, বদরপুর, থেকে যেমন গাড়িতে চেপে নির্মাণ শ্রমিকরা এসেছেন, শহর লাগোয়া টিলাবাজার ,বটরশি, সুপ্রাকান্দি, চরগোলা, পাথু, মহিষাশন শহর ও শহরতলি থেকেও নির্মাণ শ্রমিকরা লাল পতাকা কাঁধে শহরে জমা হোন।

দুপুর বারোটার চড়া রোদের মধ্যেই কালিবাড়ি রোডের সি আই টি ইউ অফিস নির্মাণ শ্রমিকদেরর এক বিশাল বর্ণাঢ্য মিছিল শহর বের হয়। মিছিল কিছুদুর যাওয়ার পর কোন কারণ ছাড়াই পুলিশ মিছিল আটকে দেয়, পরে ইউনিয়ন নেতৃত্বের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় মিছিলের পথ ছোট করে শম্ভু সাগর পারে শ্রমিকরা জমায়েত হন। সহস্রাধিক নির্মাণ শ্রমিকের উপস্থিতিতে নির্মাণ শ্রমিকদের দাবিগুলি নিয়ে বক্তব্য রাখেন ইউনিয়নের সভাপতি তরুন গুহ, শ্রমিক নেতা ব্যোমকেশ ভট্টাচার্য।

ইউনিয়নের জিলা সভাপতি তথা সি আই টি ইউর জিলা সম্পাদক শ্রমিক তরুন গুহ বলেন মানুষের আয় হ্রাস এবং বাজারে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় নির্মাণ কাজ কমছে। নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছেন না। রোজ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে, এই অবস্থায় শ্রমিকদের আইনত: প্রাপ্য সুবিধাগুলি আটকে রেখেছে রাজ্য সরকার। বিশাল উৎসব, জমায়েত, বিজ্ঞাপনের জন্য সরকারের টাকার অভাব নেই, কিন্তু গরীব শ্রমজীবী মানুষের প্রাপ্য সুবিধাগুলি মিটিয়ে দিতে সরকার অপারগ। এই সরকার চায়না গরীবের সন্তানরা শিক্ষা পাক, তাই নির্মাণ শ্রমিকের ছেলেমেয়েদের স্কোলারশিপ দিচ্ছে না।পুলিশ দ্বারা নির্মাণ শ্রমিকদের মিছিল আটকে দেওয়াকে ধিক্কার জানিয়ে তিনি বলেন দেশ দ্রুত স্বৈরতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অধিকারে কোপ পড়ছে। নির্মাণ শ্রমিকদের মিছিল পুলিশ আটকে দিয়েছে। সরকার মানুষের সবরকম গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নিতে চাইছে। কর্মচারীদের পেনশন বন্ধ করেছে সরকার, নির্মাণ শ্রমিকদের পেনশন নিরাপদ নয়। সুবিধাগুলির আবেদনে অফলাইন ব্যবস্থা উঠিয়ে দিয়েছে যাতে গরীব নির্মাণ শ্রমিকরা সুবিধাগুলির জন্য আবেদন করতে না পারেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই এই স্বৈরতন্ত্রকে পরাজিত করে নির্মাণ শ্রমিকদের আদায় করা অধিকার রক্ষা করতে হবে। এই কাজ একা নির্মাণ শ্রমিকরা পারবেন না। তাই নির্মাণ শ্রমিকের আন্দোলনকে অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের বৃহত্তর আন্দোলনের সঙ্গে যোগ করতে হবে।

তিনি বলেন আশার কথা শ্রমজীবী মানুষ অধিকারের লড়াইয়ে সংগঠিত হচ্ছেন,আরো কাছাকাছি আসছেন। বিগত ৫ই এপ্রিল দিল্লিতে শ্রমিক কৃষক সমাবেশে দশ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক কৃষক অংশ গ্রহণ করেছিলেন। জিলা থেকে আমাদের ইউনিয়নের চল্লিশজন প্রতিনিধি সেই সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।অন্য বক্তা শ্রমিক নেতা ব্যোমকেশ ভট্টাচার্য বলেন গ্রামে পঞ্চায়েতগুলি দূর্নীতির আখড়া।গ্রামীণ মানুষ হিসাবে প্রাপ্য সুবিধা,পরিকাঠামো থেকে নির্মাণ শ্রমিকরা বঞ্চিত। নির্মাণ শ্রমিকরা মানুষের বাড়িঘর তৈরী করেন অথচ তাদের বাড়িঘর নেই, ইউনিয়ন দাবি করেছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নির্মাণ শ্রমিকদের প্রাধান্য দিতে হবে, তাদের গৃহ নির্মাণের অনুদান দিতে হবে। গ্রাম,শহরের সরকারী কাজে স্থানীয় নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ দিতে হবে।

তিনি বলেন দেশের গরীব মানুষ ভালো না থাকলে একা নির্মাণ শ্রমিকরাও ভালো থাকবেন না। এই কথা নির্মাণ শ্রমিকদের বুঝতে হবে।মানুষের অধিকারের উপর অবিরাম আক্রমণ আসছে। আজ করিমগঞ্জে নির্মাণ শ্রমিকদের মিছিল পুলিশ আটকে দিয়েছে এটা নূতন কিছু নয়। আসাম সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি পরিচালিত সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলন রুখতে এই পদ্ধতি নিচ্ছে।নূতন শ্রমকোডের মধ্যদিয়ে শ্রমিকের অধিকার কেড়ে নিতে চায় সরকার। শুধু শ্রমজীবী মানুষ নয়,গোটা গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপর আক্রমণ আসছে।সংবিধান,গণতন্ত্র নিধনের মহড়া শুরু হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক নামী মহিলা খেলোয়াড়েরা সুবিচার পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের প্রতি সরকারের সহানুভূতি আশা করা বৃথা।

তিনি সাবধান করে বলেন এই মুহুর্তে দেশকে বাঁচাতে পারে শ্রমজীবী মানুষ। তাই তাদের মধ্যে ঐক্য জরুরি। তিনি বলেন শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যই জাতি, ধর্ম, বিভেদের রাজনীতিকে পরাস্ত করে দেশকে রক্ষা করতে পারে।সভা শেষে নির্মাণ শ্রমিকরা জিলা শ্রম আধিকারিকের অফিস চত্তরে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বারো দফা দাবি সম্বলিত এক স্মারকপত্র জিলা শ্রম আধিকারিকের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং দাবিগুলির সন্তোষজনক নিষ্পত্তিতে জিলা শ্রম আধিকারিকের উপযুক্ত হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করেন শ্রমিক নেতৃবর্গ।

দাবিগুলির মধ্যে ছিল নির্মাণ শ্রমিকদের বকেয়া পেনশন অবিলম্বে প্রদান করতে হবে, প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে নিয়মিত পেনশন দিতে হবে। নির্মাণ শ্রমিকদের প্রাপ্য আর্থিক সুবিধাগুলি আবেদনের তিন মাসের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে, রেজিষ্ট্রেশন সহ সুবিধাগুলির আবেদনে অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে, আধারকার্ডের জন্য কোন আবেদন নাকচ করা চলবে না, সরকারী উন্নয়নমূলক কাজে স্থানীয় নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ দিতে হবে, নির্মাণ শ্রমিকদের ঘর তৈরীর জন্য ঋণের পরিবর্তে অনুদান দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বন্টনে নির্মাণ শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে হবে, শ্রমিক স্বার্থবিরোধী শ্রম কোড বাতিল করতে হবে ইত্যাদি। আজকের কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিয়নের জিলা সভাপতি তরুন গুহ জিলা সম্পাদক অমল দে,ব্যোমকেশ ভট্টাচার্য, মহীতোষ ভট্টাচার্য, নবারুন নাথ প্রমুখ।

Show More

Related Articles

Back to top button