রন্ধন কর্মীদের বিক্ষোভে মিছিলে উত্থাল করিমগঞ্জ- জিলা শাসকের হাতে শিক্ষা মন্ত্রীর নামে স্মারকপত্র তুলে দিলো ইউনিয়ন
- দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রন্ধন কর্মীদের আন্দোলন থামবে না
- কর্মীদের এই ন্যায্য আন্দোলন বানচাল করার চক্রান্ত করছে রাজ্য সরকার
করিমগঞ্জ : পাঁচ দফা সুনির্দিষ্ট দাবির ভিত্তিতে ১লা নভেম্বর থেকে ৪ঠা নভেম্বর রাজ্যব্যাপী চারদিন কর্মবিরতির পর তাদের দ্বিতীয় দফার আন্দোলন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে সারা আসাম মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মচারী ইউনিয়ন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম পক্ষব্যাপী দাবীগুলির পক্ষে গণ স্বাক্ষর সংগ্রহের পর ২২শে ডিসেম্বর রাজ্যের প্রতিটি জিলা শাষকের অফিসে বিক্ষোভ প্রদর্শন সহ জিলা শাসকের মাধ্যমে জিলার জনগণের স্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকপত্র রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রীর নিকট প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয় ইউনিয়নের রাজ্য কমিটি। করিমগঞ্জ জিলার রন্ধন কর্মীরা তাদের পাঁচ দফা দাবির স্বপক্ষে জিলার বিভিন্ন অঞ্চলের বিশ হাজারের বেশী জনসাধারণ, ছাত্রছাত্রীদের অভিবাবক, বিবেচক, ন্যায়পরায়ন নাগরিকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে করিমগঞ্জের জিলা শাসকের হাতে তুলে দেন।
দাবি গুলির মধ্যে রয়েছে মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মীদের প্রতি মাসে নিয়মিত মজুরি প্রদান করা, বকেয়া মজুরি অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়া সহ জিলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের গাফিলতির ফলে দীর্ঘদিন ধরে মজুরি না পাওয়া জিলার রন্ধন কর্মীদের অবিলম্বে বকেয়া সহ মজুরি প্রদানের জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া, রন্ধন কর্মীদের বৎসরে ১০ মাসের বদলে ১২মাসের মজুরি প্রদান, রন্ধন কর্মীদের ন্যূনতম মজুরি মাসিক ১০ হাজার টাকা করা, কর্মরত সময়ে দূর্ঘটনা ঘটলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, কাজ হারানো রন্ধন কর্মীদের এককালীন তিন লক্ষ টাকা সহায়তা প্রদান, রন্ধন প্রকল্পকে বেসরকারীকরণের চক্রান্ত বন্ধ করা ইত্যাদি। স্মারকপত্র প্রদানের আগে জিলা উপায়ুক্তের অফিসের সামনের নির্দিষ্ট স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন রন্ধন কর্মীরা।জিলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুই সহস্রাধিক রন্ধন কর্মী এই বিক্ষোভ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন।এদিন বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন সি আই টি ইউ করিমগঞ্জ জিলা কমিটির সম্পাদক তরুন গুহ, সারা আসাম মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মচারী ইউনিয়ন, করিমগঞ্জ জিলা কমিটির সভাপতি পার্থ সারথি হাজরা, সম্পাদিকা রুমা ধর, জিলা কমিটির নেত্রী সান্ত্বনা মালাকার, বাহারুন্নেসা,রুকিয়া খানম, পার্থ ভট্টাচার্য প্রমুখ।
বিক্ষোভকে সম্বোধন করে সি আই টি ইউ জিলা সম্পাদক তরুন গুহ বলেন শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের উপর একের পর এক আক্রমণ নামিয়ে আনছে কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার। প্রকল্প কর্মীরা এর বাইরে নন। কেন্দ্রীয় সরকার একদিকে যেমন জনহিতকর প্রকল্পগুলি উঠিয়ে দিতে চায়। অন্যদিকে এই প্রকল্পগুলিতে কাজ করা কয়েক লক্ষ কর্মীদের ন্যূনতম মজুরি থেকে বঞ্চিত করছে, তারা সরকারের জনহিতকর প্রকল্পগুলির রূপায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও তাদের নিজের ঘরের উনুনে আগুন ধরে না। সরকারী কর্মচারীদের আইন সঙ্গত ন্যূনতম সুবিধাগুলি থেকে তারা বঞ্চিত। মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মচারীরা মাসিক এক হাজার টাকা হিসাবে বৎসরে মাত্র দশ মাসের মজুরি পান। ভারতবর্ষের মত দেশে বিজেপি শাসনেই তা সম্ভব।এই রন্ধন কর্মীদের ৯৭ শতাংশই গরীব মহিলা অথচ তারা মুখে মহিলাদের দূর্গা বলেন।প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাপিয়ে রন্ধন প্রকল্পের বিজ্ঞাপনে যে টাকা খরচ হয় তার কিয়দংশ কমিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মীদের মজুরি অনেকটাই বাড়ানো যেতো। রাজ্য সরকার এই মধ্যাহ্ন ভোজনকে ব্যাক্তি মালিকানায় দিতে তৎপর। স্কুলগুলি সংযুক্তিকরণের ফলে ইতিমধ্যে রাজ্যে অনেক রন্ধন কর্মী কাজ হারিয়েছেন, রাজ্য সরকার আরো স্কুল সংযুক্তিকরণের পথে হাটছেন।ফলে আরো রন্ধন কর্মীদের কাজ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।রন্ধন কর্মীদের ভবিষ্যতের সুরক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। অথচ এই দেশেরই অনেক রাজ্যে রন্ধন কর্মীরা বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। তিনি রন্ধন কর্মীদের ন্যায্য আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জিলার বিবেচক মানুষ, ছাত্রছাত্রীদের অভিবাবক সহ জিলার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন গণতান্ত্রিক মানুষের নিকট আহ্বান জানান।
মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মচারী ইউনিয়নের জিলা সভাপতি পার্থ হাজরা বলেন মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মচারীদের দাবী অত্যন্ত ন্যায্য। সরকার তাদের বারো মাস খাটিয়ে দশ মাসের মাইনে দেন। সেই মাইনেও সময়মতো দেন না। বকেয়া থেকে যায়। আসামে তারা মাসে মাত্র দেড় হাজার টাকা মাইনে পান,সেই টাকাও ঠিকমত, সময়মতো পান না। তারা দশ হাজার টাকা মজুরি দাবি করছেন, প্রতিমাসে মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার দাবি করছেন,রাজ্য সরকার মধ্যাহ্ন ভোজন বেসরকারীকরণ করে তাদের কাজ কেড়ে নিতে চান,তারা এই প্রকল্প এবং তাদের কাজ বাঁচিয়ে রাখার দাবি জানাচ্ছেন এটা কি অন্যায়।
তিনি বলেন জিলার অসংখ্য মানুষ মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মীদের দাবিগুলিকে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রীকে রন্ধন কর্মীদের দাবিগুলি মিটিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে স্মারকপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। এই স্মারকপত্রগুলি তারা জিলা আয়ুক্তের হাতে তুলে দেবেন। তিনি আরো বলেন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রন্ধন কর্মীদের আন্দোলন থামবে না। দেশের বহু রাজ্যেই রন্ধন কর্মীরা আন্দোলন করেই তাদের দাবি আদায় করেছেন। আসামের রন্ধন কর্মীরাও একই পথেই তাদের দাবি আদায় করবেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন কর্মীদের আন্দোলন ভাঙ্গার জন্য চক্রান্ত করছে রাজ্য সরকার।রন্ধন কর্মীদের আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে প্রচার চালানো হয়েছিল।এই ষড়যন্ত্রকে ব্যার্থ করে জিলার সংগ্রামী রন্ধন কর্মীরা জিলায় বিক্ষোভ সফল করেছেন। বিক্ষোভের পর রন্ধন কর্মীদের এক বিশাল মিছিল শহর পরিক্রমা করে ।