Barak Valley

রাজ্যপাল গুলাব চান্দ কাটারিয়া মালেগড় শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করলেন : করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ

জনসংযোগ, করিমগঞ্জ, ২৩ মে : আসামের রাজ্যপাল গোলাব চান্দ কাটারিয়া মঙ্গলবার করিমগঞ্জ জেলা সফর করেছেন। তিনি সোমবার রাতে করিমগঞ্জে এসে অবস্থান করেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টায় করিমগঞ্জের জেলাশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে জেলাশাসক মৃদুল যাদব, পুলিশ, বিএসএফ সহ জেলার সব কয়টি সুরক্ষা এজেন্সির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় প্রধানদের সাথে এক পর্যালোচনা বৈঠকে মিলিত হন।

পর্যালোচনা সভার শুরুতে করিমগঞ্জের জেলাশাসক মৃদুল যাদব রাজ্যপালকে উত্তরীয় ফুলের তোড়া ইত্যাদি দিয়ে বরণ করেন। এরপর রাজ্যপাল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্ম, জনহিতকর প্রকল্প, অনুদানমূলক স্কিম নিয়ে আলোচনা করেন। যার মধ্যে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, জনসাস্থ্য কারিগরির জল জীবন মিশন সহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পূর্ত, জলসম্পদ, জলসিঞ্চন, কৃষি, ফিসারী, পশুপালন ইত্যাদি বিভাগের কাজকর্মের অগ্রগতি ও রূপায়ণ নিয়ে পর্যালোচনা করেন।

পাশাপাশি তিনি সুরক্ষা এজেন্সির কর্মকর্তাদের সাথে সুরক্ষার বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখেন। পর্যালোচনা বৈঠক শেষে রাজ্যপাল সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসনের তৎপরতা এবং বিভাগীয় উন্নয়নমূলক কাজকর্ম সম্পর্কে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি জেলায় কৃষি ক্ষেত্রে প্রতিটি মরশুমে চাষাবাদের ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

পাশাপাশি জেলায় ডায়েরি ফার্মের স্বল্পতা রয়েছে বলে জানান যার জন্য ডায়েরি ফার্ম স্থাপনের পরামর্শ দেন।

এরপর তিনি সুতারকান্দি ইনল্যান্ড পোর্ট অথরিটির ইন্দো বাংলা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র সফর করেন। সেখানে বিএসএফ, ইন্দো বাংলা আন্তর্জাতিক আমদানি রফতানি সংস্থা এবং ইনল্যান্ড পোর্ট অথরিটির কর্মকর্তারা তাকে সংবর্ধনা জানান। সেখানে তাদের সাথে রাজ্যপাল বাংলাদেশের সাথে চলতি বাণিজ্য এবং ভবিষ্যতে এর উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে পর্যালোচনা করেন।

এদিন তিনি সুতারকান্দি সীমান্তে গাছের চারাও রোপন করেন।

এরপর তিনি সুতারকান্দি থেকে মালেগড় পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত পরিদর্শন করে মালেগড় সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হন। সেখানে তাকে মালেগড় সীমান্তে কর্তব্যরত বিএসএফের পক্ষ থেকে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়।

এরপর রাজ্যপাল সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতি বিজড়িত স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। এতে তিনি জানান যে ভারতের স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের মাধ্যমে শুরু হয়। এই বিদ্রোহে যেসব বীর সেনানি মালেগড়ে এসে আশ্রয় নেন এবং ওই এলাকার জনগণ তাদেরকে যেভাবে সহায়তা করেন যার পরিনাম স্বরূপ স্বাধীনতা সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গ জাগ্রত হয়। তাই এই এলাকার গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি সিপাহী বিদ্রোহের ওই বীর সেনানিদের স্মরণ করে এই পবিত্র ভূমিকে আরও উন্নত করতে সরকার থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আলোচনা করবেন বলে জানান।

পাশাপাশি তিনি দেশ বিভাজন সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন সীমান্তে যদিও দেশ বিভাজনের ফলে এপার ভারত ওপার বাংলাদেশ হয়েছে কিন্তু এই এলাকায় বসবাস করা জনগণের ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি সব এক।

এ প্রসঙ্গে সীমান্তে কাঁটাতারের বাইরে থাকা ভারতের এলাকার গোবিন্দপুরে বসবাস করা জনগণের কথা উল্লেখ করে জানান ওই বসতির জনগণকে কাঁটাতারের এপারে পুনর্বাসনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়াস করা হলেও তারা কিন্তু নাড়ীর টানে এপার এসে বসতি করতে রাজি হননি।

তিনি করিমগঞ্জ জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার সুরক্ষা সম্পর্কে সন্তোষ ব্যক্ত করেন।

এরপর রাজ্যপাল মালেগড় থেকে সরাসরি করিমগঞ্জ আবর্ত ভবনে ফিরে এসে বিকেলের দিকে হাইলাকান্দির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। যাত্রার আগে করিমগঞ্জ আবর্ত ভবনে রাজ্যপালকে পুলিশের পক্ষ থেকে সেলামি প্রদান করা হয়। এতে তিনি টিম লিডার ও ব্যান্ড মাস্টারের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন।

Show More

Related Articles

Back to top button