Barak Valley

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি,করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জিলা থেকে নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্র তুলে নেওয়ার বিরুদ্ধে করিমগঞ্জে সি পি আই (এম) এর নাগরিক সভা

জেলা জুড়ে জোরদার আন্দোলনের ডাক বামেদের

করিমগঞ্জ : খাদ্যবস্তু সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, ঔষধ, পেট্রোপণ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি,ঘন ঘন বিদ্যুৎ মাশুল বৃদ্ধি, গায়ের জোরে প্রিপেইড স্মার্টমিটার প্রতিস্থাপন,করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি জিলা থেকে রাজ্য সরকারী নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্র তুলে নেওয়া,নূতন পেনশন প্রকল্প বাতিল করে পূরাণো পেনশন ফিরিয়ে আনার দাবিতে আজ করিমগঞ্জ বিপিনচন্দ্র পাল ভবনে সি পি আই (এম) করিমগঞ্জ লোকাল কমিটির আহ্বানে নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। আহ্বানে সারা দিয়ে শহর ও গ্রামের প্রচুর নাগরিক সভায় অংশগ্রহণ করেন।

নাগরিক সভায় সভাপতিত্ব করেন সি পি আই (এম) করিমগঞ্জ জিলা কমিটির সদস্য অধ্যাপক সঞ্জেন্দু নাথ। সভায় নাগরিকদের স্বাগত জানিয়ে সি পি আই (এম) করিমগঞ্জ জিলা কমিটির সম্পাদক পরিতোষ দাশগুপ্ত বলেন অগ্রহায়ণের অকাল বৃষ্টিতে মাঠে নষ্ট হচ্ছে সোনার ধান।কৃষকরা ভীষণ ব্যাস্ত, একদিকে এখনো টিকে থাকা ফসল বাঁচাতে হবে। এরই মধ্যেই তারা অনেকে এই সভায় এসেছেন। চারদিকে এক অন্ধকার পরিস্থিতি বিরাজমান। মানুষ অসহায় বোধ করছেন।কিন্তু এই অন্ধকার শেষ কথা নয়। ইতিহাস সাক্ষী মানুষ অতীতে অনেকবারই এমন অন্ধকারে পড়েছেন, আবার মানুষই অন্ধকার কেটে আলোয় এসেছেন। মানব সভ্যতার ইতিহাস হলো উত্তোরনের ইতিহাস। বাজারে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য, ঔষধের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। পালা দিয়ে বাড়ছে সরকারী কর,মাশুল। জিএসটি থেকে পুরকর বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ভেঙ্গে পড়েছে কেন্দ্র, রাজ্য সরকারী ও মিউনিসিপ্যাল,পঞ্চায়েত পরিসেবা। সরকারী হাসপাতাল গুলোতে বড় প্রাসাদ রয়েছে কিন্তু ডাক্তার নেই, ঔষধ নেই,চিকিৎসা কর্মী নেই।জিলা হাসপাতালের অবস্থা শোচনীয়। মানুষের অনেক আন্দোলনের ফলে জিলা হাসপাতালে আই সি ইউ পরিসেবা গড়ে উঠেছিল,তা এখন বিকল। চিকিৎসা মানে এখন ফেলো কড়ি-মাখো তেল। যেখানে মধ্যবিত্তের ওষ্ঠাগত প্রাণ,গরীবেরতো কথাই নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যালয় গুলিতে পরিসেবা ভেঙ্গে পড়েছে। সরকারী দপ্তরগুলিতে শত শত শূণ্য পদ, রাস্তায় ঘুরছেন হাজার হাজার বেকার। যারা পরিসেবা নেবেন তারা রোজ নাকাল হচ্ছেন কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার নিয়োগ করছেন না। আধার কার্ডের জন্য মানুষ সরকারী কাজ করতে পারছেন না,এন আর সি, বায়োমেট্রিকের অজুহাতে কয়েক লক্ষ ভারতীয় নাগরিকের আধারকার্ড বন্ধ করে রেখে তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। মানুষের কোন কথা না শুনছে না সরকার। একতরফা ভাবে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ঘাড়ে স্মার্ট মিটার চাপিয়ে দিচ্ছে। এই স্মার্ট মিটার বসানোর পর গ্রাহকের বিল দ্বিগুণের বেশী হচ্ছে, স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু করা নেই। পরিসেবা গুলি ব্যাক্তিগতকরনের ফলেই গ্রাহকরা এই দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন অথচ তাদের কথা বলার জায়গা নেই। সরকারী স্কুল গুলিতে শিক্ষক নেই। মানুষ গাটের পয়সা খরচ করে ছেলেমেয়েদের বেসরকারী স্কুলে পড়াতে বাধ্য হচ্ছেন।সমাজের সবচেয়ে গরীব রন্ধন কর্মীদের মাত্র ১৫০০ টাকা মাইনে দেওয়ার টাকা সরকারের নেই। বৃহৎ বেসরকারী মালিকদের চোখ পড়েছে রন্ধন কর্মীদের সামান্য মাইনের উপর। তারা এই প্রকল্প হাতে পেতে চাইছে,রাজ্য সরকারও তাই চায়। রাজ্যের ৩য়,৪র্থ শ্রেণীর পদে বরাক উপত্যকার প্রার্থীদের বঞ্চনা করতে পরিকল্পিত ভাবে করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি জিলার নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্র তুলে নিয়েছে।এই বঞ্চনা চলছে রাজ্যের অন্য জিলা গুলিতেও। রাজ্য সরকার চায় না রাজ্যের বেকারেরা কাজ পাক, বিশেষ করে বরাকের বেকারেরা।

দেশে অমৃতকাল চলছে, কিন্তু এই অমৃতকাল মুষ্ঠিমেয় কিছু অতি ধনি মানুষের জন্য। অমৃতকালের প্রচারের ঢক্কা নিনাদে গরীব শ্রমজীবী মানুষের কান্না,লক্ষ বেকারের কান্না হারিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্র এবং রাজ্যের বিজেপি সরকার পূরানো পেনশন তুলে নিয়ে নূতন পেনশন চালু করেছে। কর্মচারীদের পয়সায় বৃহৎ কর্পোরেয়দের পেট ভরিয়ে কর্মচারীদের ভবিষ্যতের সুরক্ষা কেড়ে নিতে এই প্রকল্প। সবচেয়ে ভয়ের কথা এসবের সঙ্গে মানুষের মধ্যে অনৈক্য তৈরী করতে ধর্মের নামে,জাতের নামে বিভেদের শক্তিকে রাষ্ট্রশক্তি উৎসাহিত করছে। চরম হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির আড়ালে সরকার কতিপয় অতিধনি মানুষের হাতে দেশের সকল সম্পদ তুলে দিচ্ছে,অন্যদিকে অমৃতকালের প্রচারের ঢক্কা নিনাদের আড়ালে গরীব শ্রমজীবী, মধ্যবিত্ত মানুষের,অসংখ্য বেকারের আর্তনাদ হারিয়ে যাচ্ছে। বিজেপি আর এস এসের উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পিছনে লুকিয়ে থাকা কর্পোরেট প্রভুত্ব কায়েমের রাজনীতি দেশে আমদানি করা হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। মানুষ বেশীদিন তা চলতে দেবেন না। মানুষ সংগঠিত হচ্ছেন। চারদিকে আন্দোনের ঢেউ উঠছে। এই তরঙ্গ সমস্ত অশুভ শক্তির বিনাশ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অন্যবক্তা সি পি আই (এম) করিমগঞ্জ জিলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য কালিপদ নাথ বলেন মানুষকে তাদের দূর্দশার কারণগুলি বলতে হবে। দেশে খাবারের অভাব নেই তবে খাদ্যদ্রব্যের এতো দাম কেন? এবার কি কৃষকরা কি ধানের দাম পাবেন? গত বছর ফড়েরা কৃষকদের থেকে কম দামে ধান কিনে বেশী দামে সরকারী বিক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করেছে। রাজ্য সরকার ফড়েদের সুবিধা দেওয়ার জন্যই ধান ক্রয়ে এমন শর্ত আরোপ করেছে যাতে কৃষকরা ফড়েদের কাছে ধান বেচতে বাধ্য হন। ছাত্র যুবরা দেশের ভবিষ্যৎ,কিন্তু তাদের কাজ নেই। একটা গোটা প্রজন্ম ধংস হয়ে যাচ্ছে।রাজ্য সরকার পরিকল্পনা করে করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি জিলার নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্র তুলে নিয়েছে যাতে এই দুই জিলার বেকার ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় না বসতে পারে। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কিছু জিলায়ও রাজ্য সরকার একই কাজ করছে।যখন কাজ দেওয়ার কথা তখন কাজ না দিয়ে যুবকদের হাতে নেশাদ্রব্য ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকারী কার্যালয় গুলিতে অসংখ্য শূণ্যপদ থাকলেও নিয়োগ হচ্ছে না, শূণ্য পদগুলি অবলুপ্ত করা হচ্ছে। যে নিয়োগ হচ্ছে তাও ঠিকা ভিত্তিক।ক’দিন আগেও আসামে স্কুল সংযুক্তিকরণ হয়েছে আরো অনেক স্কুল সংযুক্তিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রীসভা। ২০০৪ সনে পেনশন তুলে নিয়েছে বিজেপি সরকার। এই কথাগুলো ছাত্র যুবদের বুঝতে হবে। সম্প্রতি চার রাজ্যে নির্বাচনে বিজেপি কিছুটা ভালো ফল করেছে। কিন্তু মোট ভোটের অঙ্কে তারা পিছনে। বিজেপির উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে বিরোধীদের অনৈক্য এর কারণ। রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা হবে, উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে আবার উগ্র ভাবে সামনে আনার চেষ্টা হবে। এই কাজে ভগবান রামকে প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদের চেয়ে রামকে প্রতিষ্ঠিত করার আড়ালে উগ্র হিন্দুত্ব ও কর্পোরেট প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার তাগিদ অনেক বেশী। শত্রু মিত্র চেনার সময় হয়েছে।

তিনি বলেন ধর্মগুলির মধ্যে বিরোধ নেই। বিরোধ তারাই তৈরী করে যারা গরীব মানুষের দূর্দশার কারণগুলিকে আড়াল করতে চায়।কমিউনিষ্টরা মানুষকে তার দূর্দশার কারণগুলি বলে। তাই তারা কমিউনিষ্টদের বিরোধিতা করে,ভয় পায়।তিনি বলেন অন্ধকার চিরস্থায়ী নয়। দেশ জুরে প্রতিরোধ তৈরী হচ্ছে। শহর গ্রামের মধ্যবিত্ত মানুষ, ছাত্র,যুব,শ্রমজীবী মানুষ মিলে এই অন্ধকারের শক্তিকে পরাজিত করতে হবে। তিনি জিলার মানুষকেও এই আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সভার সভাপতি অধ্যাপক সঞ্জেন্দু নাথ অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সবাইকে একজোট হোওয়ার আহ্বান জানান।

Show More

Related Articles

Back to top button