Barak Valley

১৯৪২ইং-র “ভারত ছাড়ো” আন্দোলনকে স্মরণে রেখে করিমগঞ্জে বিক্ষোভ সি আই টি ইউ সহ বিভিন্ন সংগঠনের

করিমগঞ্জ : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত নাড়া দেওয়া উল্লেখযোগ্য অধ্যায় ১৯৪২ইং-র বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের স্মরণে ৯ই আগষ্ট প্রাসঙ্গিক দাবীগুলির ভিত্তিতে স্থানীয় আম্বেদকার পার্কে বিশাল জমায়েত ও বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি স্মরণ করলো সি আই টি ইউ, সারা ভারত কৃষক সভা, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি এবং এস এফ আই।

উল্লেখ্য উদার অর্থনীতির হাত ধরে ক্রমশই দেশের সম্পদ বৃহৎ দেশি-বিদেশি কর্পোরেটের হাতে চলে যাচ্ছে। প্রতিদিন ক্ষুণ্ণ হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের লুঠের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকারের যে প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে, স্বাধীন দেশে কাজ,মজুরি, সমতা, ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়ার আশা নিয়ে শ্রমজীবী মানুষের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনোত্তর ভারতে প্রতিশ্রুতির আংশিক পূরণের মাধ্যমে প্রাপ্ত অধিকারগুলি আজ রাষ্টের মদতে বৃহৎ দেশি-বিদেশি কর্পোরেটের হাতে চলে যাচ্ছে। শ্রমজীবী নেতাদের হাত ধরেই কংগ্রেসের আহমেদাবাদ অধিবেশনে প্রথম পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উঠেছিল।ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার আগেই স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতারা স্বাধীন ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক চেহারা কেমন হবে, তার রাজনৈতিক চেহারা কেমন হবে তার পরিকল্পনা তৈরী করেছিলেন। সেখানে অর্থনীতির ভিত শিল্প, বেঙ্ক,বীমা,রেল,বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, চিকিৎসা, শিক্ষাকে রাষ্ট্রের হাতে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।পরবর্তিতে স্বাধীন ভারত সরকার সেইভাবেই কাজ করে ভারতের অর্থনৈতিক ভিত গড়ে তুলেছিল।

একইভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যদিয়ে পাশাপাশি আসা বিভিন্ন ধর্ম,ভাষা,রুচি, খাদ্যাভ্যাসের মানুষকে নিয়ে ভারতীয় জাতি গড়ে উঠার পরম্পরা এবং ভারতীয় রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি আজ কর্পোরেট আক্রমণের শিকার।কেন্দ্রে বিজেপি পরিচালিত সরকারের আমলে এই আক্রমণ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে উঠা মূল্যবোধ ও জাতিয়তাবোধের উপর আক্রমণ নেমে আসছে। মানুষের জীবিকা এবং জীবনবোধের উপর একসঙ্গে আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। এটাই কর্পোরেট ও হিন্দুত্ববাদী শক্তির অশুভ গাঁটবন্ধনের চরিত্র। বিক্ষোভকে সম্বোধন করতে গিয়ে এইকথাগুলি বলেন সি আই টি ইউ করিমগঞ্জ জিলা কমিটির সম্পাদক তরুন গুহ।

তিনি বলেন দেশে কাজ নেই, সরকারী ক্ষেত্রে পদ বিলুপ্তি হচ্ছে। কোভিড মহামারীর সময় থেকে অসংখ্য মানুষ কাজ হারাচ্ছেন। এই ধারাবাহিকতা চলছেই। রাজ্যে বেকারী সর্বকালীন মাত্রা ছাড়িয়েছে। যারা কাজ পাচ্ছেন তারাও চুক্তিভিত্তিক, শ্রম আইনে দেওয়া যাবতীয় সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।নূতন পেনশনের নামে পেনশনের অধিকারই কেড়ে নিয়েছে সরকার। শ্রমজীবী মানুষের ভবিষ্যতের সুরক্ষা নেই।ন্যূনতম মজুরি আইন দেশে রয়েছে কিন্তু বৃহৎ সংখ্যক মানুষ ন্যূনতম মজুরি থেকে বঞ্চিত।প্রকল্প শ্রমিকদের শ্রমিকের স্বীকৃতি দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার একই সময়ে রাজ্য সরকার রাজ্যের মধ্যাহ্ন ভোজন প্রকল্পকে বেসরকারী হাতে তুলে দিতে চাইছে। বাজারে খাদ্যদ্রব্য সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের চড়া দাম।সরকার রেশন ব্যাবস্থাকে অকেজো করে দিয়েছে।ঔষধের মূল্যবৃদ্ধির জন্য গরীব মানুষ রোগের চিকিৎসা করাতে পারছেন না।অনলাইন ব্যাবসা,বৃহৎ মলগুলি সাধারণ ছোট ব্যবসায়ীদের রোজগার কেড়ে নিচ্ছে। সরকার গণবণ্টন ব্যাবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়ে বৃহৎ ব্যবসায়ীদের মুনাফা বাড়ানোর সু্যোগ করে দিয়েছে।

যে আশা নিয়ে দেশের শ্রমিক, কৃষক সহ শ্রমজীবী মানুষ স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন সরকারী নীতি সেই আশাগুলিকে রোজই পদদলিত করছে। ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় মণিপুর,হরিয়ানায় আগুণ জ্বলছে, দেশের প্রধানমন্ত্রী মৌন। উদার অর্থনীতির উগ্র সমর্থক এই সরকারের আমলে কিছু বৃহৎ দেশি-বিদেশি পূঁজিপতিদের স্বার্থে সরকার একদিকে শ্রমজীবী মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার উপর আক্রমণ হানছে অন্যদিকে মানুষকে ধর্মের নামে,জাতের নামে, ভাষার নামে বিভাজিত করছে। এই অবস্থায় শ্রমজীবী মানুষই দেশকে বাঁচাতে পারে কারণ একমাত্র শ্রমজীবী মানুষই দেশকে নি:স্বার্থ ভাবে ভালোবাসে। স্বাধীনতার মর্মবস্তুকে রক্ষা করার জন্য তিনি শ্রমজীবী মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মানুষ অশুভ বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদকে দেশ থেকে তাড়ানোর সংগ্রাম করেছিলেন,আজ শ্রমজীবী মানুষকে কর্পোরেট ও ভেদবাদী শক্তিকে তাড়ানোর সংগ্রাম করতে হবে।এখানেই ‘ভারত ছাড়ো’ স্মরণের প্রাসঙ্গিকতা।দেশের কৃষকদের কথা বলতে গিয়ে তরুন গুহ বলেন কৃষকরা ফসলের দাম পাচ্ছেন না। কেন্দ্রীয় সরকার যখন এম এস পি আইন প্রণয়ন না করে দেশের কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে রাজ্য সরকার এম এস পির নামে কৃষকদের সঙ্গে রসিকতা করছে। সারের কালোবাজারি চলছে। কৃষকরা ফসলের দাম পাচ্ছেন না অথচ খাদ্যদ্রব্যের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। গ্রামে এমএনরেগায় কাজ নেই। বিগত বাজেটেও কেন্দ্রীয় সরকার এনরেগায় বরাদ্দ কমিয়েছে।এনরেগার কাজে দেদার দুর্নীতি চলছে। এই প্রকল্প গ্রামীণ দালাল, দূর্নীতিবাজ ও শাসকদলের কিছু মানুষের স্থায়ী আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। জিলার গ্রামীণ রাস্তাগুলো মানুষের চলার উপযোগিতা হারিয়েছে। সরকার উন্নয়নের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।প্রধানমন্ত্রীর জলজীবন মিশন জিলায় পর্বতের মুষিক প্রসবের মত। এই সরকার কিছু বড়লোকের স্বার্থে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে স্বাধীনতাকেই অর্থহীন করে তুলেছে। এসবই উদার অর্থনীতির ফসল। দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে। জিডিপির ৬০% এক শতাংশ মানুষের হাতে,অপরদিকে ক্ষুধার সূচকে ভারতের স্থান প্রতিদিন নীচে নামছে।

শাষকের বদন্যতায় দেশের ভিতর দুইটি দেশ তৈরী হচ্ছে।একটি কোটিপতিদের,অন্যটি গরীব মানুষের। এই সর্বনাশকে রুখতে হবে।শ্রমিক নেতা ব্যোমকেশ ভট্টাচার্য বলেন ধর্মীয় ও ভাষিক সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার।

মণিপুরে, হরিয়ানায় ক্ষমতায় থাকার স্বার্থে বিভাজনের রাজনীতি করছে। মণিপুরের ঘটনায় দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় বইছে।সরকার সুপ্রীম কোর্টে ভর্ষিত হচ্ছে। আসামে বেছে বেছে সংখ্যালঘু অঞ্চলে উচ্ছেদ চলছে। মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা না নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মিয়া সম্প্রদায়কে মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ি করছেন।ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে উপত্যকা সহ রাজ্যের সংখ্যালঘুর রাজনৈতিক অধিকারকেই নস্যাৎ করা হচ্ছে। এই সময়ে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে স্মরণ করা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন দেশ থেকে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদকে তাড়াতে দেশের শ্রমজীবী মানুষ বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্র, মানুষের উপর পুঁজিবাদী শোষনও তারাই রুখবেন। ৫ই এপ্রিল কৃষক মজদুর সংঘর্ষ সমিতির ডাকে দিল্লিতে শ্রমজীবী মানুষের সমাবেশ শাষক শ্রেণীর মনে ভয় ঢুকিয়েছে।

আগামীকাল কেন্দ্রীয় কর্মচারীরা পেনশনের দাবিতে দিল্লি সংসদ অভিযান করবেন। রাজ্য কর্মচারী, শিক্ষকরা দিসপুর অভিযান করছেন।প্রকল্প কর্মী, রন্ধন কর্মীরা দিসপুর অভিযান করছেন। দেশব্যাপী শ্রমিক,কৃষকরা আজ রাস্তায়। শ্রমজীবী মানুষ তাদের অধিকার বুঝে নিতে চাইছেন। শ্রমজীবী মানুষই এই সঙ্কট থেকে দেশকে বাঁচার পথ দেখাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

স্বাধীনতার মূল্যবোধ, মানুষের অধিকার হরণের লুটেরাদের, সাম্প্রদায়িকতার হোতাদের মানুষ ক্ষমতা থেকে ছেঁটে ফেলতে চাইছেন, সারা দেশে শ্রমজীবী ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন লড়াইয়ের জন্য তৈরী হচ্ছেন।তিনি জিলার শ্রমজীবী মানুষ, গণতান্ত্রিক চিন্তাসম্পন্ন মানুষকে এই লড়াইয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। জিলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিশাল সংখ্যক মানুষ এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন।

এদিনের বিক্ষোভে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সি আই টি ইউর জিলা সভাপতি ধর্মদাস চক্রবর্তী,কৃষক নেতা কৃপেশ দাশগুপ্ত, শ্রমিক নেতা মহীতোষ ভট্টাচার্য, পার্থ হাজরা, মহিলা নেত্রী মীরা চক্রবর্তী প্রমুখ।

Show More

Related Articles

Back to top button