করিমগঞ্জের মাধবধামে আরএসএস-এর কুড়ি দিবসীয় সামান্য ও বিশেষ বর্গের সমাপন

করিমগঞ্জ, ১৪ মে : ভারতীয় সংস্কৃতি ও দর্শন পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যাবে না, করিমগঞ্জের শ্রীগৌরীতে অবস্থিত মাধবধামে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, দক্ষিণ অসম প্রান্তের প্রথম বর্ষ শিক্ষা বর্গের সমাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেছেন স্বয়ংসেবক সংঘের অসম ক্ষেত্র প্রচারক উলহাস কুলকর্ণি।
আজ রবিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় স্বাগত প্রণাম, ধ্বজোত্তোলন ও প্রার্থনার পর শারীরিক কলাকৌশল প্রদর্শন করেন স্বয়ংসেবকরা। প্রতিবেদন পাঠ করেন সামান্য বর্গের বর্গাধিকারী মৃদুলকুমার ধর।
উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল মাধবধামে দক্ষিণ অসম প্রান্ত সংঘচালক জ্যোত্স্নাময় চক্রবর্তী প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে সামান্য বর্গ এবং ২৯ এপ্রিল বরিষ্ঠ প্রচারক শশীকান্ত চৌথাইওয়ালে বিশেষ বর্গের সূচনা করেন। সংঘের প্রচার প্রসার ও সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য প্রতিবছর অনুরূপ শিক্ষা বর্গ অনুষ্ঠিত হয় এবং ভারতমাতার সেবার জন্য স্বয়ংসেবকগণ স্ব-প্রেরণায় তথা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রশিক্ষণ বর্গে যোগ্যতা অনুসারে অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রান্তের ৯ জেলার ৬২টি স্থান থেকে সামান্য বর্গে ৮২ ও বিশেষ বর্গে ১৯ জনকে নিয়ে মোট ১০১ জন শিক্ষার্থী এই বর্গে অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রশিক্ষার্থীদের মধ্যে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ ও অধ্যয়ণরত এবং কৃষক, ব্যবসায়ী, সরকারি চাকরিজীবী, অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক-কর্মচারী প্রভৃত সকল স্তরের স্বয়ংসেবক অংশ নিয়েছেন। বর্গে বাংলা, হিন্দি, চা-জনগোষ্ঠী, ডিমাসা, তিপ্রাসা প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষা-ভাষীর শিক্ষার্থীরা ছিলেন।
কুড়ি দিবসীয় এই প্রশিক্ষণ বর্গ যাতে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে সম্পন্ন হয় সেজন্য মোট ১৫ জন শিক্ষক এবং বিভিন্ন ব্যবস্থায় কার্যরত ২৫ জন প্রবন্ধক সম্পূর্ণ সময়ের জন্য নিযুক্ত ছিলেন। প্রতিদিন ভোর চারটায় জাগরণ থেকে রাত পৌনে দশটায় দীপ নির্বাপন পর্যন্ত কার্যক্রমে ভরপুর ছিল প্রতিদিনের দিনচর্যা। সকাল ৪.৪৫ মিনিটে একাত্মতাস্তোত্রম্ অর্থাত্ ভারতমাতার বন্দনার পাশপাশি পবিত্র নদনদী, পাহাড়-পর্বত, দেব-পুরাণ, ঋষি-মুনি, মহাপুরুষ, বীর-বীরাঙ্গনাদের স্মরণ করে দিনের কার্যক্রম আরম্ভ করা ছিল নিত্য কাৰ্যসূচির প্রথম বিষয়।
সকাল-বিকাল ছিল ৪ ঘণ্টার শারীরিক প্রশিক্ষণ, যার দণ্ড পরিচালনা, দণ্ড যুদ্ধ, নিঃযুদ্ধ (মার্শাল আর্ট), পদবিন্যাস, খেলাধুলা, যোগাসন, সমতা, ব্যায়াম ও ঘোষ (শারীরিক বিকাশ, আত্মরক্ষা এবং অনুশাসনের মুখ্য পাঠ হিসাবে বিবেচিত)। তার পর স্নান, যোগনিদ্রা, ভোজন ও বিশ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন অতিবাহিত হয়েছে। বর্গ চলাকালীন কেন্দ্র, ক্ষেত্র, প্রান্ত, বিভাগ ও জেলাস্তরীয় অধিকারী ও কার্যকর্তারা সময়ে সময়ে উপস্থিত থেকে তাঁদের মূল্যবান বৌদ্ধিক উপস্থাপন এবং চর্চা, সংবাদ-সত্র পরিচালনা, রাত্রিকালীন কালাংশে অংশগ্রহণ করে পথপ্রদর্শন করেন। বিভিন্ন বিভাগে কার্যরত প্রবন্ধকরা ঐকান্তিক নিষ্ঠার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব নির্বাহ করে বর্গ সূচারুরূপে পরিচালনা করেছেন। বর্গে থাকার কুড়ি দিনের ভোজন, জলপান ইত্যাদির জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রবন্ধকরা নিজ নিজ নির্ধারিত শুল্ক প্রদান করেছেন। শিক্ষার্থীরা নিজের খরচে নিজেদের গণবেশ (ইউনিফর্ম) তৈরি করেছেন। এছাড়া প্রত্যেকেই নিজের যাতায়াত ব্যয়ভার নিজেরাই বহন করেছেন।
আজকের কুড়ি দিবসীয় প্রশিক্ষণ বর্গের সমাপন সমারোহে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও সত্র ন্যায়াধীশ মানিকলাল চট্টোপাধ্যায় এবং মুখ্য বক্তা হিসেবে বক্তব্য পেশ করেছেন সংঘের অসম ক্ষেত্র প্রচারক উলহাস কুলকর্ণি।
বৌদ্ধিক প্রদান করে অসম ক্ষেত্র প্রচারক বলেন, কারো সঙ্গে সংঘের বিরোধ নেই। সংঘ কাউকে শত্রু মনে করে না। সংঘ রাষ্ট্রহিত ও ভারতীয় দর্শনের কথা বলে। উলহাস কুলকর্ণি বলেন, ভারতীয় সংস্কৃতি ও দর্শন পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যাবে না। করোনা-কালে সমগ্র বিশ্ব তার প্রমাণ পেয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতিতে সকলের হিতের কথা বলা হয়। পৃথিবীর সর্ববৃহত্ সেচ্ছাসেবী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। স্বয়ংসেবকরা নিজেদের কার্যপদ্ধতির মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার কাজ করে যাচ্ছেন। ভারত পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে যুবা দেশ। ফলে ভারতীয়দের মধ্যে কাজ করার স্পৃহা সর্বাধিক। ভারতীয়রা চাকরির পেছনে ছুটে না। অন্যদের জন্য চাকরির স্থান তৈরির করার কাজ করেন ভারতবাসী। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, জৈবিক কৃষি, আর্থিক, সব দিক দিয়ে ভারতীয়রা অনেক এগিয়ে। ফলে ভারতীয় দর্শন ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে স্বয়ংসেবকদের অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করার আহ্বান জানান ক্ষেত্র প্রচারক উলহাস কুলকর্ণি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মানিকলাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, সংঘ শতবর্ষ পূরণের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। সংঘের বিচারধারা অতুলনীয়। যাঁরা সংঘের সংস্পর্শে এসেছেন তাঁরা ভাগ্যবান, বলেন প্রধান অতিথি। সমারোপ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রান্ত সংঘচালক জ্যোত্স্নাময় চক্রবর্তী। সামান্য বর্গের বর্গ কাৰ্যবাহ হিসেবে ছিলেন নির্মলেন্দু দেব ও বিশেষ বর্গের বর্গ কার্যবাহ রাধাকৃষ্ণণ নায়ার। সমারোহ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রান্তের বিভিন্ন বিভাগের কার্যকর্তা, সংঘের বিভিন্ন ভাতৃ-সংগঠনের কার্যকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষিকা, স্বয়ংসেবক, সমাজের বিভিম্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গ।