নামজারির নামে উত্কোচ নেওয়ার অভিযোগ করিমগঞ্জ সদর সার্কল কার্যালয়ে

করিমগঞ্জ, ১১ এপ্রিল : দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে করিমগঞ্জের সদর সার্কল কার্যালয়। করিমগঞ্জের সদর সার্কল কার্যালয়ে গড়ে উঠেছে ঘুষখোরদের আস্তানা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপ নিলেও, করিমগঞ্জের সদর সার্কল কার্যালয়ে শুরু হয়েছে উত্কোচ নেওয়ার এক অঘোষিত প্রতিযোগিতা।
গত বছরের আগস্ট উত্কোচ নিতে গিয়ে দুর্নীতি নিবারণ শাখার কাছে হাতেনাতে এই কার্যালয়ের আমিন জনৈক রঞ্জিত গোস্বামী গ্রেফতার হয়েছিলেন। তবুও নিজেদের শোধরে নেওয়ার ন্যূনতম চেষ্টা করছেন না কর্মীরা।
গত কয়েকদিন আগে আরও এক আমিন জনৈক গৌতম দাসের নামে উত্কোচ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। বিষয়টির নালিশ গড়ায় করিমগঞ্জের জেলাশাসক মৃদুল যাদবের কাছে। এর পর তাকে সদর সার্কল কার্যালয় থেকে জেলাশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণ বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় ।
আজ মঙ্গলবার আবার উত্কোচ নেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে পড়ে করিমগঞ্জের সদর সার্কল অফিস। উত্তেজনা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছোয় যে, ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা কিছু সময়ের জন্য ঘেরাও করে রাখেন সদর সার্কল অফিসার অন্তরা সেনকে।
জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার অভিযোগ ওঠে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের বড়বাবু বিমল নাথের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মাত্র পাঁচ টাকার একটি চালানের কাগজের বিনিময়ে ৫০০ টাকা উত্কোচ দাবি করেন বড়বাবু বিমল নাথ।
রামকৃষ্ণ নমঃশূদ্র নামের জনৈক এক ব্যক্তির অভিযোগ, কার্যালয়ের বড়বাবু তাঁর কাছে থেকে পাঁচ টাকার বদলে ৫০০ টাকা করে মোট তিন হাজার টাকা নিয়ে গেলেও তাঁর কাজ হয়নি। দীর্ঘদিন থেকে তিনি ঘোরপাক দিচ্ছেন কার্যালয়ে। বড়বাবুর কথামতো আজ কার্যালয়ে আসলে এদিনও তাঁর কাজ না হওয়ায় মেজাজ হারান তিনি। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কার্যালয়ের পরিবেশ।
দুপুরে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সার্কল অফিসার অন্তরা সেনকেও বেশ কিছু সময় ঘেরাও করে রাখেন ভুক্তভোগী জনগণ। যদিও উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে বিহীত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার পরই ঘেরাও মুক্ত হন সদর সার্কল অফিসার অন্তরা সেন।
অন্যদিকে ভুক্তভোগী আকদ্দছ আলি নামের আরও এক ব্যক্তির অভিযোগ, কার্যালয়েরই জনৈক হারুন নামের এক দালাল জমির নামজারির বিনিময়ে কুড়ি হাজার টাকা দাবি করে আজ থেকে কয়েকদিন আগে। দাবি অনুযায়ী অগ্রিম বাবদ ১৫ হাজার টাকা দিলেও আজ অবধি কিছুই হয়নি। ভুক্তভোগী বলেন, হারুন নামের লোকটি আসলেই দালাল। কার্যালয়ের কর্মীদের যোগসাজসে সার্কল অফিসে ঘুষের রমরমা বাণিজ্য চলছে।
প্রশ্ন উঠছে, উত্কোচ নিতে গিয়ে দুর্নীতি নিবারণ শাখার হাতে একের পর এক সরকারি কর্মচারী ধরা পড়লেও কার সাহসে উত্কোচ গ্রহণ করার প্রতিযোগিতা নেমেছেন করিমগঞ্জ সদর সার্কল কার্যালয়ের কর্মীরা? সার্কল অফিসার অন্তরা সেনেরই বা কী ভূমিকা? কার্যালয়ের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে একের পর এক অভিযোগ থাকলেও গত দু বছর ধরে যেন দুর্নীতির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ।