AssamNorth-East

বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ, জোরকদমে কাজ চলছে মহিশাসনে

করিমগঞ্জ, ১২ এপ্রিল : বহু বছর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকা করিমগঞ্জের ভারত-বাংলাদেশ রেল লাইনের পুনঃসংস্কারের কাজ চলছে জোর গতিতে। মহিশাসন-শাহবাজপুর (বাংলাদেশ)-এর মধ্যে রেল চলাচলের জন্য সীমান্ত জেলার হাজারো মানুষ সেই শুভদিনের অপেক্ষায়। যে গতিতে নির্মাণ কাজ শুরু চলছে, তাতে খুব শীঘ্রই মহিশাসন দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ শুরু হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

২০১৮ সালে ভিডিও কনফারেন্সিঙের মাধ্যমে নতুন প্রকল্পের শুভ সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটিশ আমলে ১৮৯৬ থেকে ১৮৯৮ সালে কুমিল্লা-আখাউড়া-কুলাউড়া-বদরপুর (অসমের করিমগঞ্জ জেলান্তর্গত বদরপুর) রেলপথটি চালু করেছিল তত্‍কালীন আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে। এই রেলপথটি ১৯০৩ সালে অসমের লামডিং পর্যন্ত প্রসারিত হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে রেল সংযোগের জন্য অসম চা রোপণকারী সংঘের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে ১৮৯১ সালে বাংলার পূর্ব দিকে একটি রেলপথ নির্মাণ শুরু করে। চট্টগ্রাম ও ত্রিপুরার অধুনা কুমিল্লার মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার পথ খোলা হয় ১৮৯৫ সালের রেলওয়ে ট্রাফিকে।

মহিশাসন রেলওয়ে স্টেশন করিমগঞ্জ জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত। এটি সীমান্ত রেলওয়ে ট্রানজিট সুবিধা কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত ছিল। দেশভাগের পরও এই স্টেশনটি ছিল জমজমাট। হুইসেল বাজিয়ে ছুটে চলত ট্রেন। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় মহিশাসন-লাতু রেলে চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

পরবর্তীতে মহিশাসন-শাহবাজপুর (লাতু) রুটটি ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর থেকে চালুর কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রেলওয়ে ট্রাফিকের অভাবের দরুন তা চালু হয়নি। এই রেললাইন দিয়ে তিনসুকিয়া থেকে চা নিয়ে যাওয়া হত চট্টগ্রাম বন্দরে।

অন্যদিকে শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভিবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। স্টেশনটি ২০০২ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। শাহবাজপুর বাংলাদেশ সীমান্তের সর্বশেষ স্টেশন। ইংল্যান্ডে গঠিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এ দেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নিলে ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা ১৫০ কিমি মিটারগেজ লাইন এবং ১৮৯৬ সালে কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ স্থাপন করা হয়। ওই সময় কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর লাইনের সর্বশেষ স্টেশন হিসেবে শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়।

জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারত-বাংলাদেশে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। বর্তমানে জোর গতিতে চলছে তার কাজ। বাংলাদেশে নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে কালিন্দি নির্মাণ সংস্থা এবং ভারতীয় দিকে রয়েছে সাধন দত্ত অ্যান্ড কোম্পানি। দুটিই ভারতীয় নির্মাণ সংস্থা। ২০১৮ থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয় মহিসাশনের।

অন্যদিকে উন্নতীকরণ করা হচ্ছে মহিশাসন বিএসএফ ক্যাম্পেরও। পুরোনো স্টেশন থেকে জিরো লাইন অবধি ২.৮ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইন সম্প্রসারণ করার কাজ ইতিমধ্যে প্রায় শেষ হওয়ার পথে। নতুন করে স্টেশন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

এই রেলপথ চালু হলে কলকাতার সঙ্গে শিলচরের রেল দূরত্ব অনেকটা কমে যাবে। আগামীতে রেলপথ মণিপুরের ইমফল থেকে মায়ানমার পর্যন্ত সম্প্রসারণ হবে বলে রেলওয়ে সূত্রের খবর। যা ট্রান্স এশিয়ান রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে। মহিশাসন দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ পুনরায় স্থাপিত হলে প্রাথমিক ভাবে গুরুত্ব পাবে পণ্যবাহী ট্রেন। তবে যাত্রীবাহী ট্রেনের জন্য হয়-তো কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।

Show More

Related Articles

Back to top button