Barak Valley

ভূতুড়ে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার প্ৰত্যাহার করে পোস্টপেইড ব্যবস্থা চালু রাখার দাবি শিলচরে

শিলচর, ২০ এপ্রিল : ভূতুড়ে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার প্ৰত্যাহার করে পোস্টপেইড ব্যবস্থা চালু রাখার দাবিতে শিলচরে অসম বিদ্যুত্‍ বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (এপিডিসিএল)-এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) কার্যালয়ের সামনে গণবিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন বেশ কয়েকটি অরাজনৈতিক সংগঠন এবং পুরনাগরিকগণ।

অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছাড় জেলা কমিটির উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার শিলচরের মেহেরপুরে অবস্থিত জেনারেল ম্যানেজারের কার্যালয়ের সামনে গণবিক্ষোভ কার্যসূচি পালন করেছেন নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ, ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ, সিআরপিসিসি, অল ইন্ডিয়া মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠন, এআইডিওয়াইও, মার্চ ফর সায়েন্স শিলচর চ্যাপ্টার, কোরাস সাংস্কৃতিক সংস্থা, এআইডিএসও প্রভৃতি সংগঠন এবং বিশিষ্ট নাগরিকগণ।

প্রিপেইড স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত প্ৰত্যাহার এবং নিয়মিত বিদ্যুত্‍ সরবরাহ সুনিশ্চিত করে পোস্ট পেইড ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার দাবিতে অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছাড় জেলা কমিটির আহ্বানে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন সংগঠন এবং নাগরিককুল।

বিক্ষোভ চলাকালে বক্তব্য রাখেন অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছাড় জেলা সভাপতি মন্মথ নাথ। তিনি বলেন, অসমে দীর্ঘবছর যাবত্‍ সাধারণ বিদ্যুত্‍ গ্ৰাহকরা বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি ধার্য করা মূল্য ছাড়াও ফিক্সড চাৰ্জ, এনার্জি চার্জ, ইলেকট্রিসিটি ডিউটি চার্জ, এফপিপিপিএ চার্জ ইত্যাদি বাবদ প্ৰতি মাসে বহু টাকা এপিডিসিএল কৰ্তৃপক্ষকে প্রদান করে আসছেন। অথচ গ্রাহকরা অর্থের বিনিময়ে পরিষেবা পাওয়ার পরিবর্তে ভল্টেজ ড্রপ, ল ভোল্টেজ, বিকল ট্রান্সফর্মার, সর্বোপরি লোডশেডিং-এর সমস্যায় চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ওই সব সমস্যা সমাধানে এপিডিসিএল কর্তৃপক্ষ চরম ব্যর্থতার নজির সৃষ্টি করলেও গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা আদায়ের লক্ষ্যে কোনও ধরনের আলাপ আলোচনা ছাড়াই একতরফাভাবে প্ৰিপেইড স্মাৰ্ট মিটার প্রতিস্থাপনে উঠেপড়ে লেগেছে। পুরোনো ডিজিটাল মিটার যেখানে বিদ্যুতের ১০০ শতাংশ ‘রিডিং’ নিতে সক্ষম, সেখানে গ্রাহকদের টাকায় কেনা পুরনো মিটারগুলোকে কার্যত ডাস্টিবিনে ফেলে জনগণের ট্যাক্সের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নতুন স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।

নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হরিদাস দত্ত বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের কর্পোরেট প্রভুদের পরামর্শ মেনে বিদ্যুত্‍ খণ্ডের বেসরকারিকরণের নীল নকশাস্বরূপ সংসদে উত্থাপিত বিদ্যুত্‍ সংশোধনী বিল, ২০২২-এর অন্যতম ধারা ‘প্রায়র গ্যারেন্টি অব রেভিনিউ’-কে আইনি বৈধতা প্রদানের লক্ষ্যে ও ঘুরপথে তা কার্যকর করতে ১৭ আগস্ট ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় সরকার কোভিড পরিস্থিতির সুযোগে একটি গ্যাজেট নোটিফিকেশন জারি করে। তিনি বলেন, নোটিফিকেশনে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দেশের সবকটি কেন্দ্রশাসিত রাজ্য ও মূলত শহরাঞ্চলের সরকারি কার্যালয়, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িতে এবং অন্য এলাকায় ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে।

সিআরপিসিসি-এর কো-চেয়ারম্যান সাধন পুরকায়স্থ বলেন, বর্তমানে বিদ্যুত্‍ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ তালিকায় রয়েছে এবং বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি থেকে শুরু করে নানা ধরনের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ‘ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটারি কমিশন’-এর অনুমোদন সাপেক্ষে নির্ধারিত হয়। ফলে রাজ্য সরকার ইচ্ছে করলে বিদ্যুত্‍ গ্ৰাহকদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারত যা ওই গ্যাজেট নোটিফিকেশনেও উল্লেখ করা রয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার জনসাধারণের অর্থ লুণ্ঠনের লক্ষ্যে এপিডিসিএল কৰ্তৃপক্ষকে দিয়ে গ্রাহকদের ফোনে বিদ্যুত্‍ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ম্যাসেজ পাঠিয়ে কার্যত হুমকি দিয়ে প্রিপেড ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। যা দেশের প্রচলিত গ্রাহক পরিষেবা আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রাক্তন পুর কমিশনার অতনু ভট্টাচার্য বলেন, পোস্ট পেইড ব্যবস্থা থাকাকালীন প্রতি মাসে সাধারণ গ্ৰাহকরা ১২০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুত্‍ ব্যবহার করলে প্রতি ইউনিটে ৫.৩০ টাকা, ২৪০ ইউনিট পর্যন্ত ৬.৬০ টাকা এবং তার বেশি হলে ৭.৬০ টাকা দিতে হত। কিন্তু বর্তমানে যেহেতু অগ্রিম টাকা রিচার্জ করা হচ্ছে তাই মাসিক হিসাবে মূল্য নির্ধারণের কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই গ্রাহকরা দিনে চার ইউনিটের বেশি বিদ্যুত্‍ ব্যবহার করলেই সর্বোচ্চ হারে বিল দিতে হচ্ছে। একইভাবে ফিক্সড চাৰ্জ, এনার্জি চার্জ, ইলেকট্রিসিটি ডিউটি চার্জ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও হিসাব কী হবে তা-ও অস্পষ্ট। ফলে গ্রাহকদের স্বাৰ্থ পরিপন্থী এই প্রিপেড স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপন বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের কাছে চরম অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি-র পক্ষে অরিন্দম দেব বলেন, যে সব গ্রাহক আগে মাসে ১৫০০/১৬০০ টাকা বিল দিতেন তাঁদের এখন মাসে ৩০০০ টাকার বেশি রিচার্জ করতে হচ্ছ। অথচ এ সব অভিযোগের এপিডিসিএল কৰ্তৃপক্ষ দায়সারা জবাব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রিপেইড স্মার্ট মিটার চালুর ফলে রাজ্যের হাজার হাজার মিটার রিডার কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এবং ভবিষ্যতে আরও কয়েক হাজার কর্মহীন হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে যা রাজ্যের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

এছাড়া বক্তব্য পেশ করেছেন অল ইন্ডিয়া ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় কমিটির সম্পাদক মণ্ডলির সদস্য হিল্লোল ভট্টাচার্য প্রমুখ। এর পর ওই দাবি সংবলিত একটি স্মারকপত্র জেনারেল ম্যানেজারের উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়। স্মারকপত্রটি তাঁর হয়ে এপিডিসিএলএর সিইও গ্রহণ করেন। বিক্ষোভে বহুজনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রবীরকুমার রায়চৌধুরী, মলয় ভট্টাচার্য, মানস দাস, ভবতোষ চক্রবর্তী, বিশ্বজিত দাস, চাম্পালাল দাস, কমল চক্রবর্তী, অঞ্জনকুমার চন্দ, হানিফ আহমেদ বড়ভুইয়াঁ, কনক পাল, সুব্রতচন্দ্র নাথ, শ্যামদেও কুর্মি, মাখন পাল, নকুলরঞ্জন পাল, এনাস আলি চৌধুরী, উত্তম মিশ্র, আজমল হুসেন চৌধুরী, বিমল মালাকার, দুলালি গাঙ্গুলি, দিলীপ নাথ, প্রশান্ত ভট্টাচার্য, রাহুল রায় প্রমুখ।

Show More

Related Articles

Back to top button