‘মৃত’ বেঁচে উঠল, নিজেই ঢকঢক করে জল খেয়ে আবার মরে গেল, ‘ভূতুড়ে’ কাণ্ড ভাতারে

নিজস্ব সংবাদদাতা : রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প ‘জীবিত ও মৃত’ মনে আছে? চিতা থেকে হঠাত্ বেঁচে উঠছিলেন ‘মৃত’ কাদম্বরী। প্রায় সে সরকমই ঘটনা ঘটল বর্ধমানের ভাতারে। শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার পথে সাদা কাপড়ে জড়ানো ‘মরা’ বেঁচে উঠে বসল, নিজেই চেয়ে জল খেল তারপর আবার মরে গেল।
শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের বাউড়িপাড়া গ্রামে। বছর পঁয়ত্রিশের ছোটন সর্দারের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে ওষুধ খাইয়ে ইঞ্জেকশন দিয়ে ছেড়েও দেন ডাক্তাররা। বাড়ি ফিরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন ছোটন। হাসপাতালে যাওয়ার পথেই অচেতন হয়ে যান। ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা অবধি সব ঠিকই ছিল। কিন্তু গোল বাঁধল ঠিক শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার আগে। সাদা থান কাপড়ে ভাল করে যুবকের দেহ পেঁচিয়ে যেই না খাটে তোলা, অমনি পেটের কাছটা ওঠানামা করা শুরু করে। সবাই তো ভূত, ভূত করে পালাতে পারলে বাঁচে। সাহস করে কয়েকজন নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখেন ঘনঘন শ্বাস পড়ছে। তারপর কাউকেই কিছু করতে হয়নি, যুবক নিজেই সটান উঠে বসে জল চান।
কাঁপা কাঁপা হাতে বাড়ির লোকজন জল নিয়ে এলে ঢকঢক করে আকণ্ঠ জল পান করেন ছোটন। যুবকের হাবভাব দেখে তখন মনে সাহস পান পরিবারের লোকজন। ‘মৃত’ ছেলে বেঁচে উঠেছে ভেবে হইহই শুরু হয়ে যায়। দ্রুত যুবককে নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন বাড়ির লোকজন। সকলেই বুঝে যান ছোটন মোটেও মারা যায়নি। নাড়ির গতি কমে গেছে দেখে হাসপাতাল মৃত বলে ঘোষণা করে দেয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বেশ উচিতরকম জবাব দেবেন বলে পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী সকলেই ছুটে যান হাসপাতালে। কিন্তু না এবার আর শেষরক্ষা হল না। হাসপাতালে গিয়ে আবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ছোটন। এবার সত্যি সত্যিই মৃত্যু, আর ওঠেননি, সাড়াও দেননি।
নাসিগ্রাম মোড়ে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান চালাতেন ছোটন। মৃতের আত্মীয় ছোট্টু সর্দার, উত্তম সর্দাররা বেশ রেগেমেগেই বলেছেন, হাসপাতাল ও ডাক্তারদের ভুলেই বেঘোরে প্রাণ হারাল তরতাজা যুবক। উত্তমবাবু বলেছেন, ‘ভোর তিনটে নাগাদ বাড়িতে হঠাত্ বুকে ব্যথা শুরু হয়। পর চিকিত্সকরা ছোটনকে দুটি ট্যাবলেট খেতে দেয়, দুটো ইঞ্জেকশন দেয়। তারপর চিকিত্সকের কথামত আমরা ছোটনকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু রাস্তাতেই তার হেঁচকি উঠতে শুরু করে। ফের আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু হাসপাতালের চিকিত্সক জানান যে ছোটনের মৃত্যু হয়েছে। এরপর আমরা ছোটনের দেহ বাড়ি নিয়ে আসি। বাড়িতে আনার কিছুক্ষণ পরেই ছোটন উঠে বসে জল খায়। তাকে বাঁচানোর জন্য ভাতার হাসপাতালের উপর আর ভরসা না করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু রাস্তাতেই তার মৃত্যু হয়।’
এই ঘটনা প্রসঙ্গে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম আবার মৃতের পরিবারের লোকজনকেই দোষ দিয়েছেন। তাঁর দাবি, বলেছেন, ‘যুবক মারা যাওয়ার পর হাসপাতালের নিয়ে আসে। কর্তব্যরত চিকিত্সক মৃতদেহের পোস্টমর্টেমের কথা বলতেই পরিবারের লোকজন মৃতদেহ নিয়ে পালিয়ে যায়।’