শ্রীভূমিতে জুবিনের মূর্তি-মঞ্চ হোক, তবে রমণীমোহন ইনস্টিটিউটে আপত্তি মালিকপক্ষের

রমণীমোহন ইনস্টিটিউটের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান শ্রীভূমিতে
শ্রীভূমি, ২৪ অক্টোবর : শ্রীভূমি শহরের নীলমণি রোডে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী রমণীমোহন ইনস্টিটিউটে জেলার প্রথম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কিণ্ডারগার্টেনে বলতে গেলে হাতেখড়ি হয়ে হয়েছিল প্রখ্যাত গায়ক জুবিন গর্গের। এই সূত্রে অনেকেই এই ইনস্টিটিউটে প্রয়াত গায়কের মূর্তি বসানো-সহ মঞ্চকে জুবিনের নামে উৎসর্গ করার দাবিতে সরব রয়েছেন। একটি মহল এজন্য স্বাক্ষর অভিযানও শুরু করেছে বলে জানা গেছে। সামগ্রিকভাবে চলা এই অভিযানের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি প্রকাশ করেছেন রমণীমোহন ইনস্টিটিউটের ভূমিদাতা পরিবারের সদস্য রাজর্ষি দাস।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, প্রয়াত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী জুবিন গর্গের প্রতি তাঁদের পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। তারাও চান শ্রীভূমিতে জুবিনের মূর্তি-মঞ্চ হোক। কিন্তু রমণীমোহন ইনস্টিটিউটের মঞ্চ প্রয়াত গায়কের নামে উৎসর্গ করার বিষয়টি তাঁরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
তাঁর কথায় এটা খুবই অপ্রাসঙ্গিক, যুক্তিবিহীন এবং দুঃখজনক প্রস্তাব। এটা কোনও অবস্থাতেই প্রহণযোগ্য নয়। এর স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে রাজর্ষি দাস বলেন, রমণীমোহন ইনস্টিটিউট পুরোটাই স্বর্গীয় রায়বাহাদুর রমণীমোহন দাসের স্মৃতি বহন করে চলেছে। যদি এই ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে কারো মর্মর মূর্তি স্থাপন করার প্রস্তাব উঠে, তবে তা হবে একমাত্র স্বর্গীয় রমণীমোহন দাসের। এই সহজ ব্যাপারটা স্বাক্ষর অভিযানকারী ব্যক্তিরা বুঝতে পারছেন না। এছাড়াও এই ইনস্টিটিউটের একটি ট্রাস্ট বোর্ড রয়েছে। যার চেয়ারম্যান হলেন পদাধিকারবলে জেলা আযুক্ত। আর মেম্বার সেক্রেটারি হলেন ভূমিদাতা পরিবারের সদস্য পেশায় আইনজীবী রূপেন্দ্র মোহন দাস। কিন্তু স্বাক্ষর অভিযানকারী দলের সদস্যরা এ-বিষয়ে ট্রাস্ট বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা মনে করেননি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজর্ষি দাস।
তিনি বলেন, এই মঞ্চে অতীতে বহু কিংবদন্তি গায়ক ও অভিনেতারা অনুষ্ঠান করে গেছেন। রমণীমোহন ইনস্টিটিউটের মঞ্চে যে সকল তাবড় তাবড় গায়ক ও অভিনেতারা অনুষ্ঠান করে গেছেন তাদের মূল্যায়ন কেন হচ্ছে না। এমন প্রশ্ন তুলেছেন ভূমিদাতা পরিবারের সদস্য। রমণীমোহন ইনস্টিটিউটের উন্নতিকল্প সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চূড়ান্ত অধিকার হল ট্রাস্ট বোর্ডের। আর এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন জেলা আয়ুক্ত।
পরিবারের তরফে রাজর্ষি বলেন, এ বিষয়ে অন্যদের নাক গলানো উচিত নয়। প্রয়াত জুবিন গর্গ একজন মহান শিল্পী ছিলেন। এমন মহান শিল্পীর প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম। তার মধুর কণ্ঠ সঙ্গীত জগতে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বর্তমান শ্রীভূমি শহরের সঙ্গে জুবিনের জীবনের শৈশবকালের বিভিন্ন স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তদরূপ শ্রীভূমি শহরের সঙ্গে প্রয়াত রায়বাহাদুর রমণীমোহন দাসের অনেক ত্যাগ এবং স্মৃতিও জড়িত রয়েছে। শহরের বর্তমান প্রজন্মের কাছে রমণীমোহন দাসের কীর্তি অনেকটাই অজানা। তৎকালীন করিমগঞ্জ শহরের আধুনিকীকরণ তাঁর হাত ধরেই শুরু হয়েছে। শ্রীভূমি পুরসভার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রায়বাহাদুর রমণীমোহন দাস। শ্রীভূমি পুরসভা কার্যালয়ে কিছুকাল আগেও তাঁর একটি বড় ফটো লাগানো ছিল। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে তাঁর অকালমৃত্যুর কারণে শহর উন্নতিকরণের বিভিন্ন কাজ অসমাপ্ত রয়ে যায় বলে জানান রাজর্ষি দাস। একটি চক্র রমণীমোহন ইনস্টিটিউটকে কুক্ষিগত করে রাখতে সক্রিয় রয়েছে। তবে রমণীমোহন ইনস্টিটিউট কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। ঐতিহ্যবাহী রমণীমোহন ইনস্টিটিউটের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে শহরে সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রাজর্ষি দাস। সে সঙ্গে স্বাক্ষর অভিযানের বিপক্ষে তিনি মতামত ব্যক্ত করেছেন।



