Barak Valley

CUET : হিমন্তর হস্তক্ষেপ চাইলেন কমলাক্ষ

করিমগঞ্জ : ১৯ শের চেতনা, ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে গোটা বরাক জুড়ে বহুভাষিক মিলন গড়ে উঠলেও সে সময় নিজের মাতৃভাষা নিয়ে হেনস্তার শিকার বরাকের ছাত্রছাত্রীরা। বলতে গেলে মাতৃভাষায় পড়ার অধিকার পর্যন্ত হাতের নাগালের বাইরে বরাক উপত্যকার তিন জেলার বাঙালি পড়ুয়াদের।

বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য শুরু হয়েছে কমন ইউনিভার্সিটি এন্ট্রান্স টেস্ট (সিইউইইটি)। শুরু থেকে এ নিয়ে বিতর্ক। প্রথম দিন পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি করিমগঞ্জের অনেক ছাত্রছাত্রী।

সীমান্ত জেলার প্রত্যন্ত এলাকার অনেকের পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে বাড়ি থেকে ৮০-১০০ কিমি দূরে। তাছাড়া পরীক্ষার প্রথম দিন প্রশাসনিক তরফে কোনও ধরনের বাড়তি ট্রাফিক ব্যবস্থা করা হয়নি বা আলাদা করে কোনও ট্রেনের ব্যবস্থাও করা হয়নি। তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরীক্ষার্থীদের গাড়ি ট্রাফিক জ্যামে বদরপুরঘাটে আটকে থেকে পরীক্ষায় বসা হয়নি অনেকের।

এবার সমস্যার সমাধান হওয়া তো দূর, নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন করিমগঞ্জের ছাত্রছাত্রী সহ তাঁদের অভিভাবকরা। নতুন শিক্ষানীতিতে মাতৃভাষায় পড়ার অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া সত্বেও জাতীয় স্তরের পরীক্ষা নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা শুরু হয়েছে।

কারণ, আগামী ২৪ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে মাতৃভাষা সহ ইভিএস বিষয়ের এন্ট্রান্স পরীক্ষা। যেহেতু বিষয় ভিত্তিক পরীক্ষা, তাই চার-পাঁচ দিনের পরীক্ষার আলাদা করে ইস্যু করা হয় অ্যাডমিট কার্ড।

উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে আসাম ইউনিভার্সিটির অধীনস্থ কলেজগুলোতে ভর্তি হতে গিয়ে এন্ট্রাস পরীক্ষার বাংলা সহ ইভিএস পরীক্ষা কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে বহিঃরাজ্যে। এমনিতে যাতায়াত গাড়ি ভাড়া, থাকা-খাওয়া নিয়ে বলতে গেলে নাজেহাল পড়ুয়ারা।এমতাবস্থায় আগামীদিনের পরীক্ষার অধিকাংশের সেন্টার পড়েছে মিজোরাম, শিলং বা ত্রিপুরায। অনেকের আবার গুয়াহাটি, শিবসাগর, যোরহাট, ডিব্রুগড় বা গোয়ালপাড়ায়।

ভাষা সেনানীদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের দিন ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসলে এ নিয়ে জোরদার প্রতিবাদ শুরু হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে।

বিগত দিনে বাঙালির হয়ে বিধানসভার ভেতর এবং বাইরে সরকারকে আক্রমণকারী উত্তর করিমগঞ্জের কংগ্রেসি বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকাযস্থ এবার আর এনিয়ে সরকারকে চেপে না ধরলেও গোটা বিষয়টি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সমাধান করে দিতে রবিবার চিঠি লিখেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে। শনিবার থেকে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে বরাক জুড়ে সমালোচনা ছাড়া হেনস্তার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি চিঠিতে।

যেহেতু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বরাকের ছাত্রছাত্রীদের কোনওভাবেই গুহায়াটি, শিবসাগর, যোরহাট, ডিব্রুগড় বা গোয়ালপাড়ায় গিয়ে পরীক্ষায় বসা সম্ভব হবে না সেইহেতু মিজোরাম, শিলং বা আগরতলায় পৌঁছে পরীক্ষা দেওয়ার কথা ভাবা যায় না। ফলে প্রচুর সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর বাংলা পরীক্ষায় বসা সম্ভব হবে না। স্নাতকস্তরে বাংলা বিষয় পড়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হবে বরাকের ছেলেমেয়েদের। তাই মুখ্যমন্ত্রী যেন বিষয়টি বরাকের স্বার্থে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তৎপর হন, তার জন্য জোরালো দাবি রেখেছেন তিনি ।

রবিবার সন্ধ্যায় বিধায়ক কমলাক্ষ বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নজরে বরাক উপত্যকা আলাদা ভাবে রয়েছে । কুয়েট পরীক্ষার বিষয়টি তিনি সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নজরে দিয়েছেন । যেহেতু স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীদের পড়াশুনার দায়িত্ব নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তাই এনিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন । বলেন, নির্দিষ্ট পরীক্ষার তারিখ বাতিল করে বরাক উপত্যকার যেকোন একটি কেন্দ্রে যেন দুইটি বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয় তার দাবি করেছেন উত্তর করিমগঞ্জের কংগ্রেসি (অধুনা বিজেপিমুখী) বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকাযস্থ। বিধায়ক বলেন, তিনি আশাবাদী, খুব কম দিনের মধ্যে এর সমাধান হবে।

Show More

Related Articles

Back to top button