Updates

করিমগঞ্জে বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষ্যে এসএইচজি সদস্যদের সচেতনতা কার্যসূচি

করিমগঞ্জ : বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষ্যে ও এর প্রাক্কালে ১ থেকে ৮ মার্চ করিমগঞ্জের জেলা সমাজ কল্যাণ বিভাগের অধীনস্থ ডিস্ট্রিক্ট হাব ফর এমপাওয়ারমেন্ট অব উইমেনের উদ্যোগে মঙ্গলবার করিমগঞ্জে মহিলা কল্যাণে ও তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে জেলার এসএইচজি সদস্যদের নিয়ে এক সচেতনতা কার্যসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা গ্রন্থাগার ভবনে ওই সচেতনতা কার্যসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত এসএইজি-র মহিলা সদস্য, আশা ও আঙ্গনওয়াডি কর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন। এদিনের সচেতনতা কার্যসূচিতে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট বা পারিবারিক উত্‍পীড়ন আইন, পোষ অ্যাক্ট বা কর্মক্ষেত্রে মহিলা নির্যাতন প্রতিরোধ আইন, পিসিপিএনডিটি বা প্রসব পূর্ব লিঙ্গ নির্ধারণ প্রতিরোধী আইন এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলি নিয়ে বিস্তৃত সচেতনতামূলক আলোচনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক সৈয়দ আহিদুল ইসলাম। তিনি বিশ্ব নারী দিবসের প্রাক্কালে এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অনুষ্ঠিত এই কার্যসূচিতে অংশগ্রহণ করা এসএইচজি মহিলা সদস্য, আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের উপস্থিতির জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন মহিলা কল্যাণে এই সচেতনতার বার্তা তৃণমূল স্তরে পৌছবে বলে তিনি আশাবাদী।

অতিথি বক্তাদের আসনে এই কার্যসূচিতে অংশগ্রহণ করে অতিরিক্ত মুখ্য চিকিত্‍সা ও স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. এম. সুত্রধর পিসিপিএনডিটি অ্যাক্ট ২০১১ নিয়ে বিশদ আলোচনা করে জানান যে আমাদের দেশে প্রসব পূর্ব লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এতে তিনি বলেন দেশের কেরালা ও পুদুচেরি ছাড়া প্রায় অন্য সব কয়টি রাজ্যে পুরুষের অনুপাতে মহিলা কম রয়েছে। তাই মহিলা লিঙ্গ নির্ধারণ করে মাতৃগর্ভে শিশু হত্যা করা নিবারণ করতে এই আইনের অধীনে কঠোর বিধান দেওয়া হয়েছে।

এতে কোন সোনোগ্রাফি সেন্টার যদি লিঙ্গ নির্ধারণের পরীক্ষার সাথে জড়িত পাওয়া যায় তবে তাদের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্রেশন বাতিল, ফৌজদারি মামলা দায়ের ও ওই মেশিন বাজেয়াপ্ত করার মতো ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি সমাজে সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে মহিলা ও পুরুষদের সম অধিকার প্রদান এবং সমতা বজায় রাখতে প্রয়াস অব্যাহত রাখতে পরামর্শ দেন। এতে শিশু কল্যাণ কমিটির প্রাক্তন সদস্য সত্যজিত্‍ দাস বাল্যবিবাহ নিবারণী আইন ২০০৬ নিয়ে আলোচনা করেন এবং জানান যে বর্তমান রাজ্য সরকার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কিন্তু শুধু পুলিশ ও কোর্ট দিয়ে এর সমাধান করা সম্ভব নয়।

এর জন্য সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং মন থেকে এগিয়ে আসতে হবে। এতে তিনি বাল্যবিবাহ এবং এর সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবার আইনি শাস্তির বিধান নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি বলেন এ বিষয়ে বিদ্যালয়েও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি আর্থিক অনটন ও দারিদ্রতা এর জন্য অনেকাংশের দায়ী তা নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি শিশুদের শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলতে গিয়ে জানান যদি কোন পরিবারে গৃহকর্তা অকেজ হয়ে যান বা স্বামী মারা যান তবে পরিবারের শিশুর শিক্ষার জন্য খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। এই অনুদান পাওয়ার জন্য সিডব্লউসি বা শিশু কল্যাণ কমিটির কাছে দরখাস্ত করতে হবে।

এদিনের সচেতনতা কার্যসূচিতে শিশু কল্যাণ কমিটি বা সিডাব্লিউসি”র অধ্যক্ষ বিশ্ববরণ বরুয়া মহিলাদের পারিবারিক নির্যাতন এবং পোষ অ্যাক্ট বা কর্মক্ষেত্রে মহিলা উত্‍পীড়ন প্রতিরোধী আইন নিয়ে সবাইকে সজাগতা সৃষ্টি করেন।

তিনি প্রটেকশন অব উইমেন ফ্রম ডমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট ২০০৫ নিয়ে জানান যে যদি কোন মহিলার মৌলিক অধিকার খর্ব হয় তবে তাকে প্রটেকশন অফিসারের কাছে বা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে হবে। এতে ওই পরিবার মহিলাকে সর্বাবস্থায় তার মৌলিক অধিকার দিতে বাধ্য থাকবে।

পাশাপাশি তিনি পোষ আইন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে জানান কর্ম ক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে এই আইনের ৪ নম্বর ধারা অনুসারে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠান যেখানে ১০ জন থেকে বেশি কর্মী রয়েছেন। সেখানে ৪ জনের একটি ইন্টারনাল কমিটি থাকতে হবে এবং ওই কমিটিতে একজন মহিলা অবশ্যই থাকবেন। এতে মহিলা কর্মীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওই ইন্টারনাল কমিটি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পাশাপাশি, একক ভাবে কাজ করা গৃহ পরিচারিকা ইত্যাদির এ ধরনের অভিযোগ দায়ের করার জন্য স্থানীয় কমিটি থাকছে যার মাধ্যমে অভিযোগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে জেলার সব কয়টি সুসংহত শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের শিশু উন্নয়ন প্রকল্প আধিকারিকরা অংশগ্রহণ করেন।

সচেতনতা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডিস্ট্রিক্ট হাব ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্টের প্রজেক্ট অফিসার ঈশিতা দাস।

Show More

Related Articles

Back to top button