করিমগঞ্জের তাজপুরে অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যমণ্ডিত চড়ক পূজা

করিমগঞ্জ, ১৪ এপ্রিল : দক্ষিণ অসমের গোটা বরাক উপত্যকায় চৈত্র মাসের শেষ দিন হিন্দু ধর্মের অন্যতম লোকউত্সব চড়ক পূজা পালিত হয়। গোটা বরাকের পাশাপশি করিমগঞ্জ জেলার মহিশাসনের তাজপুর এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যমণ্ডিত চড়ক পূজা।
জানা গেছে, প্রায় একশো বছর ধরে এই এলাকায় চড়ক পূজার আয়োজন করে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার পূজাস্থলে চড়ক খেলার পাশাপাশি মেলা বসে। হরেক রকমের রকমারি পসরা সাজিয়ে ছোট-বড় মাঝারি দোকান বসে মেলার মাঠে। লোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বলতে ভাওয়াইয়া গান, বাউল গান সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন জেলার বিশিষ্ট জনেরা।
অনুষ্ঠানকে ঘিরে এলাকার মানুষদের উত্সাহ ও উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। হাজারের বেশি ভক্ত অপলক দৃষ্টি ৩০ ফুট উঁচু কাঠের দণ্ডে। তিনজন মানুষ শূন্যে ঘুরছেন একটি রশিতে ঝুলে। দড়িটি বাঁধা ওই মানুষগুলোর পিঠের চামড়ার সঙ্গে গাঁথা বড় দুটি বড়শির সঙ্গে। চলছে উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি। বাজছে ঢাকঢোল। বড়শিতে ঝুলন্ত তিনজনের সঙ্গীরা ফুল-জল, আবির, বাতাসা, নকুলদানা ইত্যাদি ছিটিয়ে দিচ্ছেন অগণিত ভক্ত-দর্শকের দিকে।
প্রায় এক মাস আগে থেকে চড়ক উত্সবের আয়োজন শুরু হয়। ধর্মানুরাগী ‘সন্ন্যাসী’রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৃত্যগীতের মাধ্যমে চড়ক পূজার জন্য চাল ও অর্থ সংগ্রহ করেন। এঅ দিনগুলোতে তাঁরা সন্ন্যাসব্রত ও উপবাস পালন করেন। এ সময় স্থানীয় শ্মশানগুলোয় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা নানা পূজা-অর্চনা করে থাকেন।
উত্সব আয়োজক কমিটির রূপক ভট্টাচার্য বলেন, প্রতি বছরের পূজা শেষে মন্দিরের পুকুরে ডুবিয়ে রাখা চড়কগাছকে নতুন পূজার সময় তুলে আনা হয়। মাঠের মাঝখানে গর্ত খুঁড়ে খাঁড়া করে বসানো হয় এই চড়ক গাছকে। চৈত্র সংক্রান্তির দিন চড়ক পূজা সহ মেলা শেষ পর্যন্ত আর হিন্দু সম্প্রদায়ের মেলা থাকে না। এটা এ অঞ্চলের হিন্দু-মুসলমানের মিলনমেলায় পরিণত হয় ।