অবিলম্বে বাংলা সাহিত্য সভার কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করতে হবে, দাবি BDF-র

শিলচর : অসমিয়া ও বাঙলা গামছা তথা সংস্কৃতিকে অপমান করার দায়ে অবিলম্বে বাংলা সাহিত্য সভার কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করতে হবে ,দাবি বিডিএফ এর।
সম্প্রতি গৌহাটিতে বাংলা সাহিত্য সভা, আসাম নামক একটি সংগঠনের অধিবেশনে অতিথিদের স্বাগত জানাতে অসমিয়া ও বাঙালি গামছা অর্ধেক কেটে জোড়া লাগিয়ে সম্ভর্থনা দেওয়া হয়েছে যা নিয়ে সারা রাজ্যে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এবারে এর প্রতিবাদে সরব হল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
এই ব্যাপারে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে এই ভুঁইফোড় সংগঠনটির এই প্রচেষ্টায় অসমিয়া সম্প্রদায় সঙ্গত কারনেই ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন কারণ দীর্ঘকাল ধরে অসমিয়া গামছাকে তারা তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক বলে মনে করেন। তাই এভাবে অসমিয়া গামছাকে বিকৃত করে সমগ্র অসমিয়া জাতির ভাবাগেবএ আঘাত দেওয়া ক্ষমাহীন অপরাধ। তিনি বলেন বরাকের সরকারি ভাষা আইন লঙ্ঘন করে অসমিয়া সাইনবোর্ড লাগানোর অপরাধে যদি তাকে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জেলে পাঠাতে পারেন তবে অসমিয়া সংস্কৃতিকে অপমান করার দায়ে এইসব সংগঠকদের কেন জেল হবেনা? যদি তেমন কোন পদক্ষেপ না নেওয়া হয় ,তাহলে অবশ্যই বুঝতে হবে এসবের পেছনে সরকারি মদত রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে প্রদীপ বাবু আরো বলেন যে সম্প্রতি কোকরাঝাড়ে সমস্ত অসমিয়া সাইন বোর্ডে কালো কলি লাগিয়ে মুছে দিয়েছে অল বোড়ো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। কিন্তু সারা আসামের কোথাও কোন প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। তিনি বলেন যারা বিডিএফ এর প্রতিবাদের সময় মিডিয়া ট্রায়াল বসিয়েছিলেন, কুশপুতুল পুড়িয়েছিলেন কোথায় গেলেন সেসব অসমিয়া জাতিয়তাবাদের ধ্বজাধারীরা ? কোথায় গেলেন আসু কিংবা লাচিত সেনা ?তার মানে কি ধরে নিতে হবে যে বোড়োদের তারা ভয় পান এবং বাঙালিরা ভদ্র বলে তাদের দুর্বল মনে করেন ?
প্রদীপ বাবু এদিন আরো বলেন যে এভাবে গামছা জোড়া দিয়ে বকচ্ছপ সমন্বয়ের প্রচেষ্টা হাস্যকর। তিনি বলেন অসমিয়া ও বাঙালি ভাষিক গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একসাথে বসবাস করছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সমন্বয়ের কখনই অভাব হয়নি। তিনি বলেন দুই গোষ্ঠীর বিভেদের মুল কারিগর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তিনি বলেন যদি ডি ভোটার নোটিশ ,এনার্সি ইত্যাদি করে বাঙালিদের হেনস্থা করা হয়,যদি বরাক উপত্যকার বাঙালিদের সরকারি চাকরি না দেওয়া হয়, যদি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় একের পর এক বাংলা স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়, যদি ভাষিক আগ্রাসনের নিত্যনতুন ছক কষা হয় তবে সমন্বয়ের আশা দুরাশা মাত্র। তিনি বলেন যেহেতু বিডিএফ এবং বরাকের মানুষ এসবের বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে শুরু করেছেন তাই সরকার ভয় পেয়েছে। এবং সেজন্যই সরকারি মদতে এসব মেকী সমন্বয়ের নাটক
করা হচ্ছে। প্রদীপ বাবু এদিন বলেন যে গামছা বাঙালিদের পুজোপার্বন বা শ্রমজীবী মানুষের প্রয়োজনে ব্যাবহৃত হলেও তা দিয়ে কখনই অতিথি বরণ করা হয়না। তাই অসমিয়া দের অন্ধ অনুকরণ করতে গিয়ে এসবের মাধ্যমে সংগঠকরা বাঙালি ঐতিহ্য সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা ও চাটুকারিতার প্রমান পেশ করেছেন। তিনি বলেন এই সংগঠন কোনভাবেই রাজ্যের বাঙালিদের প্রতিনিধি নন। বরাকের কিছু চাটুকার ও মীরজাফর ,যারা এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য রেখেছেন তাদেরও সম্পুর্ন ভাবে বর্জন করার জন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে এই অধিবেশনের মঞ্চে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেই শিলাদিত্য দেব যিনি বরাকে এসে সবাইকে ভাষা সংগ্রামের আবেগ ও ভাষা শহীদদের ভুলে যাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। জয়দীপ বলেন যার বিন্দুমাত্র আত্মগরিমা নেই, বাঙালিদের কলঙ্ক সেই নেতা যে সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সেই সংগঠন কতটা বাঙালিদের স্বার্থে কাজ করবে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। জয়দীপ আরো বলেন যে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে শিলাদিত্য হিন্দু অসমিয়া ও হিন্দু বাঙালিদের একত্রীকরণ করতে চাইছেন তা একমাত্র বিজেপি দলের ভোটব্যাঙ্ক স্ফীত করার স্বার্থে। এর সাথে রাজ্যের বাঙালিদের প্রকৃত উন্নয়ন কিংবা সমন্বয়ের কোন সম্পর্ক নেই।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।