Barak Valley

করিমগঞ্জের বারইগ্রামে রাধারমণ গোস্বামী জিউর আশ্রমে বিজয়া সম্মেলন

বারইগ্রাম : বাঙালির সর্ববৃহত্‍ উত্‍সব দুর্গাপূজা। সনাতন ধর্মের সারা বছর নানা উত্‍সব পালিত হয়। এর মধ্যে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আগে-পরে নানা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। দুর্গা আসার আগে আগমনী, এর পর পুজোর কয়েকদিন শেষে বিজয়া, প্রতিটি অনুষ্ঠান আলাদা আলাদা করে আয়োজন করা হয়ে এবং প্রতিটি অনুষ্ঠানের বিশেষত্ব আছে।

বারইগ্রামে শ্রীশ্রী গোপাল জিউ, শ্রীশ্রী রাধাবিনোদ জিউ ও শ্রীশ্রী রাধারমণ গোস্বামী জিউর আশ্রমে সর্বজনীন শ্রীশ্রী শারদীয়া দুর্গাপূজা কমিটির আয়োজিত বিজয়া সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন অসমের এএসটিসি-র চেয়ারম্যান মিশনরঞ্জন দাস।

পূজা কমিটির সভাপতি রঞ্জিত কুমার দাসের পৌরোহিত্য অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় মিশন দাস বলেন, রামায়ণে ‘ভরত’ চরিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভরত রাজা হয়ে একদিনের জন্যও সিংহাসনে বসেননি। এ রকম আদর্শবান ব্যক্তি খুবই কম পাওয়া যায়। তাঁর মতে, জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। এই জয়ী হওয়াটাই বিজয়া সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য বলে জানান।

মিশন বলেন, আমি নিজেকে হিন্দু বলতে গর্ব বোধ করি। কারণ হিন্দু ধর্মে প্রতিটি প্রাণীর মঙ্গলের কথা চিন্তা করা হয়। তাই বলা হয়, ‘সর্বে সুখিনঃ ভবন্তু’, ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’। এই মন্ত্রের মাধ্যমে সারা বিশ্বকে আপন করে নিয়েছে হিন্দু ধর্ম। এই ধর্মে বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে অমৃতের সন্তান হিসেবে গণ্য করা হয়।

হিন্দুরা বিশ্বের প্রতিটি ধর্মকে সত্য বলিয়া মেনে নিয়েছে। শ্রীচৈতন্য, স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব বা প্রভুপাদ রাধারমণ গোস্বামী, তাঁদের মতো অনেক মহাপুরুষ হিন্দু ধর্মের অন্যতম বিপ্লবী। তাঁর মতে, তাঁরা তাঁদের মতো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিন্দু ধর্মের প্রচার এবং প্রসারে কাজ করে গেছেন।

মিশন দাস বলেন, দুর্গা মাকে শক্তি রূপে পূজা করি আমরা। ভারত মাতার আর এক রূপ দুর্গা।

অখণ্ড ভারতের বর্ণনা করতে গিয়ে সমাজ কর্মী তথা মহিলা নেত্রী শিপ্রা গুণ বলেন, আফগানিস্তান, ইরান, নেপাল, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ ভারতেরই ছিল। একদিন আবার আখণ্ড ভারত হবে, জয় হবে আমাদের। বিজয়া সম্মেলন সম্পর্কে শিপ্রা গুণ বলেন, বিজয়া আনন্দের উত্‍সব নয়। এটা ত্যাগের উত্‍সব। হিন্দু ধর্মে ভগবানের সঙ্গে ভক্তের সম্পর্ক কতটুকু তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন অনুষ্ঠানের অতিথি শিপ্রা।

আশ্রম কমিটির সম্পাদক তরুণ চৌধুরী আক্ষেপের সুরে বলেন, বাঙালির প্রাণের উত্‍সব দুর্গাপুজোর পর বিজয়া সম্মেলন বা বিজয়োত্‍সব পর্বটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমান নবপ্রজন্ম দুর্গাপুজোর মানেই বুঝে না, বিশেষ করে যুবসমাজ ধর্মীয় দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছেন। তাই ক্রমাগত সামাজিক অবক্ষয় ও অধঃপতন বাড়ছে। বর্তমান প্রজন্ম পূজা বা উত্‍সব মানে শুধু বুঝে ফুর্তি। তিনি শারদীয় উত্‍সবের একাল-সেকালের পেক্ষাপট তুলে পুজো এবং বিজয়ার বৈদিক ও শাস্ত্রীয় দিক তুলে ধরে সভাকে আকর্ষিত করে বলেন, ধর্মীয় চিন্তাচর্চার অভাবে, বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদ আজ খাদের মুখে রয়েছে। স্বাজীজির আর্দশ থেকে সরে যাচ্ছে যুব সমাজ। তাই স্বামীজির অনুসরণ ও অনুকরণ ছাড়া সমাজ ও দেশের উন্নতি সাধন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, সনাতন ধর্ম মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ শিখিয়েছে।

আশ্রমের প্রধান সেবাইত প্রনবানন্দ দাস বাবাজি বলেন, গীতায় অন্য ধর্মকে হিংসা বিদ্বেষ করতে শেখায়নি। সকলকে নিয়ে চলার উপদেশ দিয়েছে আমাদের ধর্মগ্রন্থ। যার জন্য ভারত ও ভারতের নাগরিকদের বিশ্বের মানুষের কাছে অনেক সমাদর। পুজো শুধু হিন্দুরা নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষের উত্‍সব। কেউ ধর্মের সঙ্গে আবার কেউ কর্মের সঙ্গে পূজায় শামিল হন।

এদিন প্রদীপ প্রজ্বলন করে বিজয়া সম্মেলনের শুভ সূচনা করেন এএসটিসির চেয়ারম্যান মিশন রঞ্জন দাস এবং পূজার দিনগুলোর নানা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ কার্যসূচির সূচনা করেন প্রণবানন্দ দাস বাবাজি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আশ্রম কমিটির সভাপতি সুনীল পাল, সহ-সভাপতি বাদল পাল, প্রচার সম্পাদক কার্তিক পাল, সম্পাদক রাজদীপ দাস, সুনয়ন দাস। এদিন বিজয়ীদের পুরস্কৃত করার পাশাপাশি পূজায় বিশেষ ভূমিকা গ্রহণের জন্য কমিটির নবপ্রজন্মের যুবক সৌরভ দত্ত, সৌরভ পাল, দিলীপ মালাকার, অভিজিত্‍ পাল, রাজদীপ শুক্লবৈদ্য, অনুজ দাস পুরকায়স্থ, পঞ্চম আদিত্য সানি নাথ, নিশীথ দাস, মদন পাল, বুদ্ধ দাস, দীপরাজ রায়, স্নেহাশিস দেব, জয় পাল, জয় দাস, শুভজিত্‍ দাস, অনুপম দাস, কল্লোল দাসদের বিশেষ স্মারক সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়।

Show More

Related Articles

Back to top button