Barak Valley

করিমগঞ্জে দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনিক সভা : পূজা কমিটিগুলিকে নিয়ম ও দায়িত্ব জানিয়ে দেওয়া হল

জনসংযোগ, করিমগঞ্জ, ৪ অক্টোবর : আসন্ন দুর্গা পূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে বুধবার করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। করিমগঞ্জের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদবের পৌরহিত্যে তার কার্যালয়ের সভাকক্ষে বুধবার সকাল ১১ টায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এ এস টি সির চেয়ারম্যান মিশন রঞ্জন দাস, উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, করিমগঞ্জের পৌরপতি রবীন্দ্র চন্দ্র দেব, বিজেপি দলের জেলা সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য, উপ পৌরপতি সুখেন্দু দাস, পুলিশ সুপার পার্থ প্রতিম দাস, ডিডিসি দীপক জিডুং, এডিসি ধ্রুবজ্যোতি দেব, ধ্রুবজ্যোতি পাঠক, উদয় শঙ্কর দত্ত, মিনার্ভা দেবী আরামবাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রতাপ দাস, সব চক্র আধিকারিক, সহকারি আয়ুক্তগণ, বিএসএফের কর্মকর্তা, বিভাগীয় আধিকারিক, ওয়ার্ড কমিশনারগণ সহ পূজা কমিটির কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।

সভায় বিগত বছরের দুর্গোৎসবের সিদ্ধান্তগুলি পাঠ করে শুনানো হয়। তারপর আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুসারে পূজা কমিটি গুলিকে নিয়ম ও দায়িত্ব জানিয়ে দেওয়া হয়ে। এতে জানানো হয়েছে যে সব পূজা কমিটি সংশ্লিষ্ট সার্কল অফিস থেকে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রয়োজনীয় অনুমতি গ্রহণ করবে। এর জন্য তাদেরকে পূজা কমিটির সভাপতি ও সচিবের টেলিফোন নম্বর সহ নাম তথা যে কোন দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য পূজা প্যান্ডেলের রাত্রিযাপন করা স্বেচ্ছাসেবকদের ফোন নম্বর সহ নামের তালিকা জমা করতে হবে।

পাশাপাশি পূজা কমিটি গুলিকে অনুরোধ করা হয়েছে যে তারা ক্লাবের বা কমিটির নাম বিসর্জনের তারিখ সময় ও স্থান উল্লেখ করে একটি ডিক্লেয়ারেশন জমা করবে। প্রতিটি পূজা কমিটি যেকোন জরুরীকালীন পরিস্থিতির জন্য পূজা মন্ডপে বালি, জল ও অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম ও পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাস্টবিন পূজা মন্ডপের পাশে রাখবে। ওই ডাস্টবিন থেকে পৌরসভার সাফাই কর্মচারীরা আবর্জনা সংগ্রহ করবে এবং পূজা মন্ডপের আশেপাশে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।

পূজা কমিটি গুলিকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে অনুরোধ করা হয়েছে যাতে কোন ধরনের অবাঞ্চিত ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। পূজা কমিটিগুলিকে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটর রাখতে বলা হয়েছে যাতে পূজা নির্বিঘ্নে উদযাপন করা সম্ভব হয়।

পূজা কমিটি গুলিকে যানবাহন রাখার জন্য একটি অস্থায়ী পার্কিং স্থলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ধরনের পার্কিং এর স্থান রাস্তা এবং মণ্ডপ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে এবং ভালভাবে আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। পূজা কমিটি গুলিকে মন্ডপে প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য পৃথক গেইটের ব্যবস্থা এবং পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ব্যারিকেডের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। পূজা কমিটি গুলিকে মণ্ডপে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য উৎসবের এক সপ্তাহ আগে এপিডিসিএল থেকে অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে। পূজা কমিটি গুলিকে সুনিশ্চিত করতে হবে যে মন্ডপের ভিতরে ও বাহিরে যাতে একসাথে ভক্তদের অত্যাধিক ভিড় না হয় এবং সেচ্ছাসেবকরা ভিড় সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবে। পাশাপাশি মুখ্য স্থানগুলিতে দিশা নির্দেশ ও সঠিক সাইনিজ টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে।

পূজা কমিটি গুলিকে রাস্তার প্রবেশ পথ ও মুখ্য রাস্তা অবরোধ মুক্ত রাখতে হবে, যাতে প্রয়োজনে অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স বিনা বাধায় চলাচল করতে পারে। যদি দাবি বিহীন বা পরিত্যক্ত কোন ব্যাগ, সুটকেস ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয় তবে পূজা কমিটিকে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ কন্ট্রোলরুমে জানাতে বলা হয়েছে। পূজা মন্ডপের আশেপাশে কোন ধরনের অস্থায়ী স্টল বা চাট হাউস ইত্যাদি স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ স্টেশন থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিতে হবে। এতে আরও জানানো হয়েছে যে পূজা ও বিসর্জনের দিনগুলিতে রাস্তার পাশে কোন ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, ব্যান্ড, অর্কেস্ট্রা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত না করা পূজা কমিটি গুলিকে সুনিশ্চিত করতে হবে। পূজা কমিটিকে মহামান্য উচ্চতম ন্যায়ালয়ের নির্দেশ অনুসারে ১০ ডেসিবেল থেকে অধিক শব্দ মাত্রায় রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কোন লাউডস্পীকার ও মাইক ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না, তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে পূজা কমিটিকে বিসর্জনের দিন প্রতিমা নিয়ে শোভা যাত্রার সময় কোন ধরনের উচ্চ শব্দ মাত্রার ও অশালীন সঙ্গীত ও নৃত্য ইত্যাদি পরিবেশন থেকে বিরত থাকা সুনিশ্চিত করতে হবে যাতে এ ধরনের কার্যকলাপ জনগণের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত না করে। এ ব্যাপারে পূজা কমিটির সভাপতি ও সচিবকে সুষ্ঠুভাবে প্রতিমা বিসর্জন সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত মনে প্রানে সচেষ্ট থাকতে হবে। সভায় জেলাশাসকসহ প্রতিজন বক্তা উচ্চ শব্দ মাত্রায় ডিজে ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে এবং যথাসময়ে প্রতিমা বিসর্জন করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি পুজোর দিনগুলিতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ থেকে শহরে তিন বেলা জল সরবরাহ করা হবে এবং শহরের সড়কগুলির মেরামতি শীঘ্রই শুরু হচ্ছে বলে জানানো হয়।

এদিকে শহরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে বিপদজনকভাবে থাকা গাছের ডাল শীঘ্রই কেটে ফেলতে এবং ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তার শীঘ্রই সারাই করতে জেলাশাসক নির্দেশ দেন।

এতে পুলিশ সুপার পূজা কমিটির কর্মকর্তাদের পূজা মণ্ডপ ও সংলগ্ন এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করতে আহ্বান জানান যাতে কোন ধরনের অবাঞ্চিত ঘটনা এড়ানো এবং যানবাহন চলাচল সুচারু রূপে চলাচল সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি, তিনি মন্ডপের চতুর্দিকে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতেও আহ্বান জানান যাতে মন্ডপের সবদিকে নজরদারি রাখা যায়। এতে তিনি আরও জানান যে আইনশৃঙ্খলা ও অন্যান্য যেকোনো পরিস্থিতিতে যোগাযোগের জন্য একটি পুলিশ কন্ট্রোল রুম কার্যকরি থাকবে, যার মোবাইল নম্বর হচ্ছে ৮০৯৯৬৬২২৭৫। এছাড়া পুজার দিনগুলিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও একটি পৃথক কন্ট্রোল রুম কার্যকরী করা হবে বলে জানানো হয়।

Show More

Related Articles

Back to top button