করিমগঞ্জে মহাযোগী গোরক্ষনাথের আবির্ভাব তিথি উদযাপন
করিমগঞ্জ : করিমগঞ্জে মহাযোগী গোরক্ষনাথের আবির্ভাব তিথি যোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে নাথ মিশন ট্রাস্ট৷ এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার করিমগঞ্জ জেলা গ্রন্থাগার মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে গোরক্ষনাথের আবির্ভাব তিথি পালনের সূচনা হয়৷ নাথ মিশনের সভাপতি প্রাক্তন বিধায়ক প্রণবকুমার নাথ সহ উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা পতাকা উত্তোলন করেন৷ এরপর নরেশ নাথের পৌরোহিত্যে গোরক্ষনাথের পূজার্চনার পর নগর পরিক্রমা করা হয়৷
যোগসাধ্বী রানি ময়নামতী ও বিমলা দেবী স্মৃতি মঞ্চে প্রদীপ প্রজ্বলন এবং শিব-গোরক্ষনাথের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন পুরোহিত নরেশ নাথ সহ আমন্ত্রিত অতিথিরা৷
প্রাক্তন বিধায়ক প্রণব কুমার নাথের পৌরোহিত্যে মহাযোগী গোরক্ষনাথের জীবনাদর্শ, সাধনপ্রণালী ও সনাতন ধর্মে তাঁর প্রভাব ও অবদান তুলে ধরে প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তব্য রাখেন ধর্মনগর থেকে আগত বিশিষ্ট আইনজীবী, সাহিত্যিক হৃষীকেশ নাথ, করিমগঞ্জ রবীন্দ্রসদন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপিকা ড. তনুশ্রী ঘোষ, অসম নাথযোগী উন্নয়ন পরিষদের সহ-সভাপতি বিপ্লব দেবনাথ, লালা প্রবাহ সাময়িকীর সম্পাদক আশিসরঞ্জন নাথ, শিলচরের প্রবন্ধকার তপনকান্তি নাথ, কবি জিতেন্দ্র কুমার নাথ, ওঁকার ব্রহ্মচারী, রবীন্দ্র নাথ, লোকেশ চন্দ্র ভৌমিক৷
ড. তনুশ্রী ঘোষ বলেন, বল্লাল সেনের রাজত্বকালেই নাথ ধর্মকে অনেক পীড়া সহ্য করতে হয়েছে৷ তিনি বলেন, যখন বল্লাল সেনের মাতৃবিয়োগ ঘটে তখন গুরু পীতাম্বর নাথকে যখন বল্লাল সেন বললেন, পিণ্ড গ্রহণ করার জন্য৷ তখন গুরু সেগ পিণ্ড নিতে অস্বীকার করেন৷ তখন বল্লাল গুরুর পৈতা ছিঁড়ে দিলেন৷ তখন বলেন, আজ থেকে নাথরা শূদ্র শ্রেণিভুক্ত৷ আর সেই সময় বল্লাল সেনের ক্রোধে অসংখ্য নাথদের হত্যা করা হয়েছিল৷ সেই কারণে নাথরা তাদের পৈতা খুলে দিলেন যার পরিমাণ ৮৬ মন৷ তিনি আরও বলেন, পাল শাসনকালে নাথ ধর্ম আবার বিস্তার লাভ করে৷ নাথ ধর্ম মূলত ব্রাহ্মণ্য ধর্ম৷ নাথরা রুদ্রজ ব্রাহ্মণ৷ তাঁরা মৃতদেহ দাহ করে না, সমাধিস্থ করে৷ নাথরা যোগী৷ আরও বলেন, নাথ ধর্ম নাথ দর্শন এমন এক শ্রেষ্ট ধর্ম যে তার তুলনা নেই৷ তিনি নাথ ধর্মের বিভিন্ন সিদ্ধাগণের জীবনী তুলে ধরেন৷
এদিন, কদমতলা রামকৃষ্ণনগরের সুখেন্দুকুমার নাথের কাঠখোদাই করা মহাযোগী গোরক্ষনাথের প্রতিকৃতি মঞ্চে উন্মোচন করা হয়৷ এছাড়া শিক্ষক-প্রাবন্ধিক তপনকান্তি নাথের একাদশ প্রবন্ধ নিয়ে লেখা গ্রন্থ ‘অলক নিরঞ্জন’ আনুষ্ঠানিক ভাবে উন্মোচিত হয়৷ এদিন মঞ্চে গীতবিতান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা এবং সোহম কালচারেল বিদ্যালয়ের শিল্পীরা শিব, দুর্গা, কালী সেজে একাধিক নৃত্য পরিবেশন করেন৷
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক মিহির দেবনাথ, কবি-শিক্ষিকা জয়ন্তী নাথ, নিরঞ্জন নাথ, হেমেন্দ্র নাথ, নরেশ নাথ, মঙ্গলা নাথ, সুভাষ নাথ, রঞ্জনা নাথ, উত্তম কুমার নাথ প্রমুখ৷