করিমগঞ্জে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন বিভাগের উদ্যোগে বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও অভিযানের অধীনে বার্তালাপ
জনসংযোগ, করিমগঞ্জ : করিমগঞ্জের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন বিভাগের উদ্যোগে শনিবার, সকাল ১১ টায় করিমগঞ্জের জেলা গ্রন্থাগার ভবন প্রেক্ষাগৃহে বেটি বাচাও বেটি পড়াও অভিযানের অধীনে এক বার্তালাপ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে করিমগঞ্জের পুলিশ বিভাগকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিসিটিভি ক্যামেরা প্রদান করা হয়।
এতে বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও অভিযানের অধীনে প্রদান করা এই ক্যামেরা করিমগঞ্জের জেলা আয়ুক্ত পুলিশ সুপারের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেন। পাশাপাশি, জেইই ও নিট্ পরীক্ষায় সফলতা লাভ করা ছাত্র-ছাত্রীদের মানপত্র প্রদান করে সংবর্ধিত করা হয়।
শনিবার জেলা গ্রন্থাগার ভবনে করিমগঞ্জের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদবের পৌরোহিত্যে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে এএসটিসি-র চেয়ারম্যান মিশন রঞ্জন দাস, পুলিশ সুপার পার্থপ্রতিম দাস, এডিসি মিনার্ভা দেবী আরামবাম, বিদ্যালয় সমূহের পরিদর্শক অনুপ কুমার দাস সহ রিসোর্স পার্সন হিসেবে ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সদস্য সচিব মনিকা বড়ো, পাথারকান্দি কলেজের প্রবক্তা ড. মুনমি সইকিয়া, ডায়েটিশিয়ান ডা. মমতা পাল সাহা, যোগাসন প্রশিক্ষক পরমজিত্ চৌধুরী প্রমুখ বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে আগত ছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা, অভিভাবকরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে এর সূচনা করা হয়, তারপর স্বাগত ভাষণ দেন করিমগঞ্জের সহকারি আয়ুক্ত এবং ভারপ্রাপ্ত জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক রূপক মজুমদার। এতে সমাজ কল্যাণ বিভাগের এডিসি মিনার্ভা দেবী আরামবাম বলেন, তিন মাস ব্যাপী চলা বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও অভিযানের অধীনে মেয়েদের কল্যাণে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে যার মধ্যে বর্তমানে মেয়েদের আত্মরক্ষার টাইকান্ডো প্রশিক্ষণ চলছে। বিদ্যালয়গুলি থেকে বিবিবিপি বা বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও চ্যাম্পিয়নদের বাছাই করা হয়েছে। এ দিনের অনুষ্ঠানে ওই চ্যাম্পিয়নদের হাতে সামগ্রী হিসেবে একটি ব্যাগ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে জেলা আয়ুক্ত বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও অভিযানের অধীনে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য প্রতিটি ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে বলে জানান। পাশাপাশি, তিনি করিমগঞ্জ জেলায়ও এই অভিযানের অধীনে বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সামাজিক স্তরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আত্মরক্ষা, খেলাধুলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান। অনুষ্ঠানে এএসটিসির চেয়ারম্যান, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মেয়েদের কল্যাণে গ্রহণ করা বিভিন্ন প্রকল্পের লাভ গ্রহণ করতে পরামর্শ দেন তিনি মেয়েদের শিক্ষা স্বাস্থ্য আত্মরক্ষায় গ্রহণ করা পদক্ষেপ গুলির প্রশংসা করেন এবং বিভাগের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার খাতিরে প্রদান করা সিসিটিভি ক্যামেরা খুবই উপযোগী হবে বলে মত প্রকাশ করেন। পাশাপাশি, তিনি মেয়েদের যে কোন ধরনের হেনস্তার ক্ষেত্রে মৌনতা অবলম্বন না করে তাত্ক্ষণিকভাবে অভিযোগ দায়ের করতে আহ্বান জানান। যাতে ওই হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সহ ভবিষ্যতে এ ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
অনুষ্ঠানে পুলিশ অধীক্ষক বলেন অপরাধী গতিবিধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে করিমগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে ২৫ টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি, তিনি মহিলা ও শিশু উন্নয়ন বিভাগের পক্ষ থেকে এই ক্যামেরা প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি সময় সময়ে পুলিশ বিভাগে ও মহিলা ও শিশু উন্নয়ন বিভাগের সমন্বয়ে মেয়েদের সুরক্ষায় বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন জেলার প্রতিটি পুলিশ স্টেশনে মহিলাদের সুরক্ষার খাতিরে ওম্যান হেল্প ডেস্ক রয়েছে। এছাড়া জাতীয় স্তরে ওয়েব পোর্টাল রয়েছে যাতে অভিযোগ দায়ের করা যায়।
অনুষ্ঠানে ডিস্ট্রিক লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সদস্য সচিব মেয়ে শিশুদের আইনি অধিকার, হেনস্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার ইত্যাদি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। পাশাপাশি, যোগাসন, ধ্যান, প্রাণায়াম ইত্যাদির মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়ন এবং পড়াশুনায় মনোনিবেশের জন্য এগুলির ভূমিকা নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিস্তৃত আলোচনা করেন যোগাসন প্রশিক্ষক পরমজিত্ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে ড. মুনমি সইকীয়া সাইন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অর্থাত্ স্ট্যাম নিয়ে আলোচনা করে জানান। এর মাধ্যমে কর্ম ক্ষেত্রে ৪৩ শতাংশ সুবিধা থাকলেও শুধু ১৪ শতাংশ মহিলারাই এক্ষেত্রে নিয়োজিত হচ্ছেন। এতে মহিলাদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির জন্য সমাজে প্রতিটি পরিবারে মাতা পিতা অভিভাবকে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে পরামর্শ দেন।
ডায়টেশিয়ান মমতা পাল সাহা তার বক্তব্যে কিশোরীদের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন হতে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই প্রাতরাশ গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। তিনি অনুপাত হারে প্রোটিন গ্রহণ, খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসব্জি, ফলমূল গ্রহণ, পড়াশুনার পাশাপাশি নিয়মিত ৭ থেকে ৮ ঘন্টার নিদ্রার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে রিসোর্স পার্সনরা ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করে।
এদিনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের নিয়ে বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও অভিযান সম্বলিত একটি ব্যানারে সিগনেচার ক্যাম্পেইনও অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে মেয়েদের শিক্ষণীয় বিষয় নিয়ে একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।