Barak Valley

থিমে রবীন্দ্র ভাবনা, সেজে উঠছে কুশিয়ারকুলের সুবর্ণজয়ন্তী মন্ডপ

করিমগঞ্জ, ২৪ সেপ্টেম্বর : দুর্গোৎসব উপলক্ষে এখন চরম ব্যস্ততা করিমগঞ্জ জেলা সদরে৷ শহরের বিগ বাজেটের পুজো মন্ডপগুলির প্রস্তুতি বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে৷ এরমধ্যে অন্যতম ঐতিহ্যবাহী কুশিয়ারকুল ক্লাব৷ এবছর এই পুজা ৫০ বছরে পা ফেলছে৷ শহর করিমগঞ্জ ছাড়াও জেলার মানুষের কাছে প্রতি বছর একটি বড় আকর্ষণ থাকে কুশিয়ারকুল ক্লাবের দুর্গাপূজার থিম৷ সেই ধারা অব্যাহত রাখতে এবং ৫০ বছরের পূজো স্মরণীয় করে রাখতে এবারও বিশেষ থিম তৈরি করা হচ্ছে৷ এবার একদিকে সুবর্ণ জয়ন্তী, অন্যদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুন্দরী শ্রীভূমি ভ্রমণের ১০৪ বছর পূর্তি৷ এই দুটি উল্লেখযোগ্য বিষয় মনে রেখে কুশিয়ারকুলের মন্ডপে থাকছে কবিগুরুর ছোঁয়া৷ রবীন্দ্রনাথের সৃ্ষ্টিকেই পুজোর থিম হিসেবে বেছে নিয়েছেন উদ্যোক্তারা৷ শান্তিনিকেতন থেকে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি, এমনকি সহজপাঠ কিছুই বাদ যাচ্ছে না এবারের থিমে৷ রবীন্দ্র ভাবনাই এবারের এই কমিটির বিশেষ আকর্ষণ৷ তাঁরই প্রতিফলন থাকছে মন্ডপের সাজসজ্জায়৷ মন্ডপে থাকছে বিশ্বকবির লেখা বই৷ এককথায়, সুবর্ণ জয়ন্তীতে পুরোপুরি রাবীন্দ্রিক চমক এবার কুশিয়ারকুলে৷ সুতরাং রবীন্দ্র অনুরাগীরা প্রাণের ছোঁয়া পাচ্ছেন এবারের আয়োজনে৷

পুজো কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন অসিতভূষণ দেব৷ সম্পাদক হীরালাল সূত্রধর৷ মন্ডপ তৈরির দায়িত্ব নিয়েছেন করিমগঞ্জের রাজু বণিক৷ কলকাতার মৃৎশিল্পী সমীর পালের তত্বাবধানে প্রতিমা গড়া হচ্ছে শহরের প্রণবানন্দ শিল্পালয়ে৷ আলোকসজ্জায়ও থাকবে নতুনত্ব৷ পঞ্চমী থেকে দ্বাদশী অবধি রয়েছে নানা আয়োজন, নানা অনুষ্ঠান৷ থাকছে মহিলা ঢাকি সহ ছৌ-নাচ৷ মহোৎসবের ৫ দিন রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন হবে লাউড স্পিকারে৷ সুবর্ণ জয়ন্তীতে বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে মহিলা ঢাকির দল৷ পশ্চিমবঙ্গের ২০ জনের মহিলা ঢাকির দলের সঙ্গে থাকছেন ছৌ নাচের ২০ জনের শিল্পী দল৷ শিশুদের আকর্ষিত করতে থাকছে রণ’পা ও জেডরিং৷ থাকছে ঢাকি দল৷ পঞ্চমীর উদ্বোধনে দ্বাদশী তিথিতে প্রতিমা নিরঞ্জনে আয়োজন করা হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার৷

পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা পিনাকপানি দেব (রাজু) জানান, মূলত কুশিয়ারকুল পূজো কমিটির সূবর্ণ জয়ন্তী এবং সুন্দরী শ্রীভূমিতে কবিগুরুর পদাপর্ণের শতবর্ষ এবার৷ এই দুটি বিষয় স্মরণীয় করে রাখতে কবিগুরুর চিন্তাধারাকে সম্মান জানিয়ে তাঁর ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে৷ রবীন্দ্রভাবনাকে যুব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে রবীন্দ্রসৃষ্টিকেই ভর করে থিম তৈরি করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে কুশিয়ারকুলে পূজার সূচনা হয়৷ কলকাতা সহ বাংলাদেশের অনেক গুণী শিল্পী বিজয়া দশমীর পরবর্তী অনুষ্ঠানে এখানে সঙ্গীত পরিবেশন করে গেছেন৷ তাঁদের মধ্যে ছিলেন অমর পাল, হীরালাল সারকেল, স্বপন বসু, মানষী মুখার্জী, সৈকত মিত্র, অধীর বাগচি সহ অনেকে৷ আবার যাদের হাত ধরে এই পূজোর সূচনা, তাঁরা অনেকেই প্রয়াত৷ তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রথীন্দ্রনাথ সেন, দেবেশচন্দ্র শ্যাম, অমিতাভ চক্রবর্তী, উমাশঙ্কর চক্রবর্তী, সুনীল দাস, নেপাল দাস, বিমলেন্দু দেব, মানিককুমার লোধ প্রমুখ৷

এবারে পঞ্চম দিনে রয়েছে সম্মাননা প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ এছাড়া আয়োজকরা জানান প্রস্তুতি চূড়ান্ত৷ কোনও ধরনের খামতি যাতে না থাকে, তারজন্য আগে থেকেই সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ পূজো চত্বরে ভিড় সামাল দিতে ৫০ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে৷ সুবর্ণ জয়ন্তীর মন্ডপ উদ্বোধন হবে পঞ্চমীতে৷ বিশেষ বছরকে স্মরণীয় রাখতে সব কিছুতেই থাকবে নতুনত্ব৷ সোনালী রঙে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে মন্ডপ৷ আলোর তোরণ ছাড়া সড়কের দু’পাশে থাকছে নানা ধরনের নজরকাড়া ডিসপ্লে৷

Show More

Related Articles

Back to top button