Updates

মজুরি বৃদ্ধি সহ ৫ দফা দাবিতে রন্ধন কর্মীদের বিক্ষোভ করিমগঞ্জে

দাবি আদায়ে ভবিষ্যত জোরদার লড়াইয়ের ডাক দিয়ে শেষ হলো রন্ধন কর্মীদের চারদিনের কর্মবিরতি। শেষ দিনের কেন্দ্রীয় পিকেটং রূপ নেয় বিশাল সমাবেশে

করিমগঞ্জ : প্রতিমাসে নিয়মিত মজুরি প্রদান, বকেয়া মজুরি প্রদান, ন্যূনতম মাসিক মজুরি দশ হাজার টাকায় বৃদ্ধি করা সহ পাঁচ দফা দাবিতে ১লা নভেম্বর থেকে ৪ঠা নভেম্বর রাজ্যব্যাপী চার দিনের কর্ম বিরতি পালন করছেন রাজ্যের রন্ধন কর্মীরা।পাঁচ দফা দাবির ভিত্তিতে রাজ্যব্যাপী এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সি আই টি ইউ অন্তর্ভুক্ত সারা আসাম মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মচারী ইউনিয়ন। করিমগঞ্জ জিলাতেও রন্ধন কর্মীরা বিগত ১লা নভেম্বর থেকে কাজ বন্ধ রেখে এই ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। ধর্মঘটের প্রথমদিন অর্থাৎ ১লা নভেম্বর তারা বদরপুর প্রাথমিক শিক্ষা খণ্ড আধিকারিকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং পিকেটিং করেন।

অনুরূপ ভাবে ২রা নভেম্বর রামকৃষ্ণনগর এবং ৩রা নভেম্বর পাথারকান্দি শিক্ষা ব্লক অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং পিকেটিং করা হয়।আজ ধর্মঘটের চতুর্থ এবং শেষদিনে সহস্রাধিক রন্ধন কর্মী সকাল আটটা থেকে উত্তর করিমগঞ্জ খণ্ড প্রাথমিক শিক্ষা আধিকারিকের অফিসের সামনে জড়ো হন।তারা হাতে লাল পতাকা এবং দাবি সম্বলিত প্লে-কার্ড নিয়ে তাদের দাবির স্বপক্ষে শ্লোগান দিতে থাকেন। এক সময়ে তারা প্রাথমিক খণ্ড শিক্ষা আধিকারিকের অফিসের গেটে বসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এবং পিকেটিং করতে থাকেন।তারা অফিসের কর্মীদের তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার অনুরোধ জানান এবং তাদের অফিস বয়কট করে বাড়ি চলে যেতে বলেন। মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মীদের আন্দোলনের ফলে এদিন উত্তর করিমগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা খণ্ড আধিকারিকের অফিসের তালা খোলা যায় নি।

এদিনের পিকেটিং-এ অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের জিলা সভাপতি পার্থ সারথি হাজরা, সম্পাদিকা রুমা ধর, করিমগঞ্জ লোকাল কমিটির সম্পাদিকা বাহারুন্নেসা খানম, সভানেত্রী সান্ত্বনা মালাকার, সি আই টি ইউ করিমগঞ্জ জিলা সম্পাদক তরুন গুহ, শ্রমিক নেতা মহীতোষ ভট্টাচার্য, কালিপদ নাথ প্রমুখ।

এদিন সাংবাদিকদের সামনে সারা আসাম মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মচারী ইউনিয়নের করিমগঞ্জ জিলা সম্পাদিকা রুমা ধর বলেন রন্ধন কর্মীরা সমাজের সব থেকে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলা। তারা মাসিক ১৫০০ টাকা মজুরিতে রন্ধন প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যান।বছরে ১২ মাসের বদলে ১০ মাসের মজুরি পান। এই মজুরিও সময়মত পান না।

সভাপতি পার্থ সারথি হাজরা বলেন করিমগঞ্জ জিলার প্রায় অর্ধেক রন্ধন কর্মী দীর্ঘদিন মজুরি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। অথচ জিলার শিক্ষা বিভাগের অভিবাবকরা ঠাণ্ডাঘরে আরামের নিদ্রা যাচ্ছেন। রাজ্য সরকার রন্ধন কর্মীদের সম্পর্কে নির্বিকার। তাদের কাছে বিজ্ঞাপনের জন্য যথেষ্ট অর্থ আছে, অরুনোদয়ের মাধ্যমে ভোট কেনার জন্য অর্থ রয়েছে অথচ যারা হাড়ভাংগা পরিশ্রম করছেন তাদের পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য অর্থ নেই। অথচ ভারতবর্ষেরই কেরালা, তামিলনাড়ু, বিহার, ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের মত রাজ্যগুলিতে রন্ধন কর্মীরা বর্ধিত হারে মজুরি,উৎসব ভাতা,মাতৃত্বকালীন সবেতন ছুটি,চিকিৎসা অনুদান,পোষাক ভাতা, অবসর সময়ে এককালীন সহায়তা অনুদান ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। আমাদের সরকার মহিলাদের মুখে দুর্গা বলে কার্যতক্ষেত্রে তাদের ভাতে মারছে। তাই বাধ্য হয়েই রন্ধন কর্মীরা ধর্মঘটে নেমেছেন। তাদের দাবি নিয়মিত প্রতিমাসে মজুরি প্রদান, বকেয়া মজুরি প্রদান, ন্যূনতম মজুরি দশ হাজার টাকা করা,রন্ধন প্রকল্পকে বেসরকারীকরণ না করা? এটা কি অন্যায় আবদার তিনি প্রশ্ন রাখেন।

সি আই টি ইউ জিলা সম্পাদক তরুন গুহ বলেন রন্ধন কর্মীদের প্রতি সরকারের দৃষ্টভংগী অমানবিক। শুধু রন্ধন কর্মী নয় সমস্ত ক্ষেত্রের প্রকল্প কর্মীরা আন্দোলনে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে যে আন্দোলন করছেন মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মীদের আন্দোলনের মঞ্চ থেকে আমরা তাদের ন্যায্য আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছি। প্রকল্প কর্মীদের সমস্যাগুলোর মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। এই প্রকল্প কর্মীদের চাকরির শর্ত একই রকম।সরকার এদের কর্মচারীর মর্যাদা দেয় না। শুরু থেকেই তাদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধাগুলি থেকে বঞ্চিত করে রাখছে। তাদের কাজের নিরাপত্তা নেই,ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা নেই, অথচ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি তাদের দ্বারা সম্পন্ন হয়। বর্তমানে এই স্বল্পবেতনভূক কর্মীদের স্বল্প আয়ের উপর বৃহৎ বেসরকারী মালিকদের লোলুপ নজর পড়েছে। তারা এদের কাজগুলি কেড়ে নিতে চাইছে। সরকারও জনকল্যানমূলক প্রকল্পগুলি আর রাষ্ট্রের হাতে রাখতে চাইছে ন। এই অবস্থায় আন্দোলন করেই প্রকল্প কর্মীদের একদিকে কাজ বাঁচাতে হবে, অন্যদিকে তাদের ন্যায্য দাবীগুলো আদায় করতে হবে। তিনি বলেন রন্ধন কর্মীরা এই আন্দোলনে নেমেছেন। তিনি এই সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে রন্ধন কর্মীদের আন্দোলনের পাশে থাকার আবেদন জানান। পিকেটিং শেষে রন্ধন কর্মীরা মিছিল করে জিলা আধিকারিকের অফিসে গিয়ে তার মাধ্যমে পাঁচ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকপত্র রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীর নিকট প্রেরণ করেন।

এছাড়া অফিসের গাফিলতিতে করিমগঞ্জ জিলায় দীর্ঘদিন ধরে মজুরি না পাওয়া রন্ধন কর্মীদের মজুরি সুনিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করেন।

Show More

Related Articles

Back to top button