তাঁতিদের গামছা তৈরি করতে অনুপ্রাণিত করুক সরকার, দাবি করিমগঞ্জের আড্ডায়

করিমগঞ্জ : জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ সহ বাঙালির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গামছা ব্যবহৃত হয়৷ বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে গামছা৷ শুধু বাঙালি কেন উড়িয়া, বিহারি, মণিপুরি, পাঞ্জাবি, তামিল, তেলেগু সহ সব জাতির মধ্যে গামছার প্রচলন অতি প্রাচীন৷ করিমগঞ্জের আড্ডার উদ্যোগে রবিবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেন, সাংবাদিক পি কে রায়৷
পবিত্র দেবের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনার বিষয় ছিল ‘বাঙালি সংস্কৃতি ও গামছা’৷
ড. তনুশ্রী ঘোষ বলেন, গামছা বাঙালির নিত্য ব্যবহার্য বস্ত্র৷ ধর্মীয় সহ সামাজিক অনুষ্ঠানে গামছার ব্যবহার অতি প্রাচীন৷ পূজা-পার্বণে ঘট আচ্ছাদন হিসাবে গামছার ব্যবহার হয়৷ বিয়েতে বর-বধূর অধিবাস, আদ্রি স্নানে গামছা ব্যবহৃত হয়৷ তবে মর্যাদার প্রতীক হিসাবে গামছাকে প্রচার করেনি বাঙালি৷ সভা-সমিতিতে গামছা দিয়ে বরণ করার রীতি নেই৷ সভা-সমিতি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথিদের বরণ করা হয় উত্তরীয় দিয়ে৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উত্তরীয় দিয়ে বরণ করার প্রথা চালু করেছিলেন৷
তনুশ্রী বলেন, ভারত তথা সমগ্র বিশ্বে কোটি কোটি বাঙালি রয়েছেন৷ বিশ্বে বাংলার স্থান ৭ নং৷ বাঙালি জাতির বিলীন হবার ভয় নেই৷ সমগ্র বিশ্বে বাঙালির বিস্তার হচ্ছে দ্রুত গতিতে৷
পি কে রায় বলেন, গামছা বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ৷ শাস্ত্র মতে, পূজা-পার্বণে গামছার ব্যবহার নিয়মিত হচ্ছে৷ ধর্মীয় রীতি ও সমাজ জীবনে গামছার ব্যবহার অপরিহার্য৷
দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, আজ থেকে ৩০/৪০ বছর আগে বরাক উপত্যকায় স্থানীয় গামছার বড় বাজার ছিল৷ নাথ যোগী সম্প্রদায়ের লোকেরা তাঁতে গামছা বুনতেন৷ শহরের বনমালী রোডে নাথ বাজার ছিল৷ সাপ্তাহিক বাজারে নাথ যোগী সম্প্রদায়ের তাঁতিরা গামছা নিয়ে আসতেন৷ বরাক উপত্যকা সহ রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকে খদ্দেররা তাঁতিদের হাতে তৈরি গামছা কিনে নিয়ে যেতেন৷ কালক্রমে তাঁতের বদলে মেশিনে তৈরি গামছা বাজার দখল করতে শুরু করে৷ তাঁতের গামছার তুলনায় মেশিনে তৈরি গামছা খানিকটা সস্তা হওয়ায় তাঁতের গামছার বিক্রি কমছে৷
তিনি বলেন, তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মেশিনে তৈরি গামছা বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করুক সরকার৷ তাঁত শিল্পীদের সরকারি তরফে রেহাইমূল্যে সুতা ও আর্থিক অনুদান প্রদান করলে নাথ যোগী সম্প্রদায়ের তাঁতিদের গামছা বাঙালির ঘরের শোভা বর্ধন করবে৷
আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে অংশ নেন অপূর্ব দত্ত, শ্যামল প্রসাদ চৌধুরী, অরূপ রতন দাস, রাহুল চক্রবর্তী, নির্মাল্য দাস, সুখেন্দুবিকাশ পাল, বিধানচন্দ্র নাথ প্রমুখ৷