‘মুলুক চলো’ আন্দোলনের ১০৩তম বর্ষপূর্তি, রামকৃষ্ণনগর কলেজে শ্রদ্ধাঞ্জলি সমারোহ

রামকৃষ্ণনগর : ‘মুলুক চলো আন্দোলন’-এর ১০৩-তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার করিমগঞ্জ জেলার অন্তর্গত রামকৃষ্ণনগর কলেজে বিবিধ কার্যসূচির মাধ্যমে অমর বীর শহিদদের প্রতি শ্ৰদ্ধাঞ্জলি প্রদান করা হয়েছে। এদিকে করিমগঞ্জ জেলা সদরেও ‘মুলুক চলো আন্দোলন’-এর ১০৩-তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আজ নানা কাৰ্যক্ৰম পালিত হচ্ছে।
অখিল ভারতীয় ইতিহাস সংকলন যোজনার রাষ্ট্ৰীয় মহাসচিব হেমন্ত ধিং মজুমদারের উপস্থিতিতে শহিদ তর্পণ, অতিথি বরণ, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহতি অনুষ্ঠানে করিমগঞ্জের বিদায়ী সাংসদ তথা এবারের এই সংসদীয় আসনে বিজেপি প্রার্থী কৃপানাথ মালা, চা বাগানের বিভিন্ন স্তরের কর্মী, শ্রমিক সংগঠক সামাজিক ব্যক্তিত্ব সহ বিশিষ্ট নাগরিকগণ অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া আজকের এই অনুষ্ঠানে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ উপলক্ষ্যে ভারতীয় ইতিহাস সংকলন সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনাসভায় বিভিন্ন বক্তা ‘মুলুক চলো আন্দোলন’-এর প্ৰেক্ষাপট তুলে ধরেন। তাঁদের বক্তব্যে প্রকাশ, তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে চা শ্ৰমিকদের নানা কারণে-অকারণে অত্যা্চার-অবিচার শোষণ করত ব্রিটিশ শাসকরা। এতে শ্রমিকদের মধ্যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ এক সময় গণ-আন্দোলনের রূপ নেয়।
ফলস্বরূপ ১৯২১ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের শ্রীহট্ট (বর্তমান সিলেট, বাংলাদেশ) জেলাধীন করিমগঞ্জ মহকুমার (অধুনা ভারতের অসম রাজ্যের বরাক উপত্যকার অন্তর্গত করিমগঞ্জ জেলা) অন্তর্গত রাতাবাড়ি থানাধীন চরগোলা ভ্যালি চা বাগানের শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে ‘মুলুক চলো আন্দোলন’-এর ডাক দেন।
সে সময় সাহেব এবং হাতেগোনা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়া গাড়ি-ঘোড়ার প্রচলন ছিল না। এমতাবস্থায় শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে অথবা নৌকাযোগে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন ‘মুলুক চলো আন্দোলন’-এ অংশগ্ৰহণ করতে। এ ঘটনায় ব্রিটিশ শাসকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
‘মুলুক চলো আন্দোলন’-এ অংশগ্ৰহণ করে তদানীন্তন অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তানের শ্রীহট্ট জেলার মেঘনা নদী দিয়ে নৌকাযোগে বাড়ি ফেরার পথে শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে বর্বরোচিত গুলি চালিয়েছিল ব্রিটিশ শাসক পরিচালিত পুলিশ। গুলিতে বহু শ্রমিক শহিদ হয়েছিলেন।
এর পর ওই আন্দোলন ‘মুলুক চলো আন্দোলন’ নামে পরিচিতি লাভ করে। সেদিনের শহিদ বীরদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে আজ সমারোহ অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে।