Barak Valley

সাইবার অপরাধীর খপ্পরে করিমগঞ্জের শিক্ষক, নগাঁও থেকে গ্রেফতার মহিলা সহ দুই কুখ্যাত

করিমগঞ্জ : রাজ্য জুড়ে ব্যাপক হারে বেড়েছে সাইবার অপরাধ। অসম পুলিশের কঠোর অবস্থানের পরও সাইবার অপরাধীরা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত কয়েকদিনের মধ্যে অসম সহ বহিঃরাজ্য থেকে ৫৬ জনকে সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ।

আজ শনিবার করিমগঞ্জেও প্রকাশ্যে এসেছে ভয়ংকর এক সাইবার অপরাধের ঘটনা। করিমগঞ্জ পুলিশ সাইবার অপরাধে জড়িত প্রতারক চক্রের সক্রিয় দুই সদস্য মহিলা সহ দুই চাঁইকে গ্রেফতার করেছে নগাঁও জেলা থেকে। ধৃতদের জামাল উদ্দিন এবং নাজমিন সুলতানা বলে শনাক্ত করা হয়েছে।

আজ শনিবার করিমগঞ্জের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য তুলে ধরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রতাপ দাস জানান, গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন পাথারকান্দির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল হামিদ। শিক্ষকের দায়েরকৃত এজাহারের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিশ। করিমগঞ্জ পুলিশ নগাঁও থেকে গ্রেফতার করেছে মহিলা সহ দুই সাইবার অপরাধীকে। পাশাপাশি উদ্ধার হয় বহু আপত্তিকর নথি, এটিএম কার্ড, নগদ টাকা।

তিনি জানান, সিম পোর্ট করে প্রতারক চক্রটি তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকা। এ মর্মে তিনি এজাহার দায়ের করেন থানায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, গত জুলাই মাসের ২২ তারিখ কারস্টার কেয়ার থেকে পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি। এর পর প্রতারক চক্রটি তাঁর ঠিকানায় পৌঁছে মোবাইলের সিম কার্ড আপডেট করার কথা বলে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তির কথায় সায় দিয়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট তাদের হাতে দিলে তখনই চক্রটি তাদের কাজ হাসিল করে নেয়। মোবাইল নম্বর পোর্টাবিলিটি মাধ্যমে এসএমএস দিয়ে তার পোর্টিং কোর্ড হাতিয়ে নেয় তারা। এর পর ১৫ দিনের মাথায় সিম কার্ডটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রতারক চক্রটি তাঁর ওটিপি শেয়ার করে ইউপিআই লেনদেনের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকা।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক আব্দুল হামিদ পাথারকান্দি থানায় লিখিত এফআইআর দায়ের করলে ২৭০/২০২৩ নম্বরে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪২০/৩৭৯ ধারায় মামলা রুজু করে করিমগঞ্জ সাইবার সেল বিভাগের সহযোগিতায় তদন্ত শুরু করে নগাঁওয়ে এই চক্রের অবস্থান সম্পর্কে সন্ধান লাভ করে। এর পর করিমগঞ্জ পুলিশ সহযোগিতা নেয় নগাঁও পুলিশের। চক্রের সন্ধানে করিমগঞ্জ পুলিশের একটি বিশেষ দল রওয়ানা দেয় নগাঁও-এর উদ্দেশ্যে। সেখানে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে হানা দেয় নগাঁও জেলান্তর্গত কামপুর থানা এলাকার সিমলাপথার গ্রামে।

সিমলাপথার গ্রামে চক্রের ঘাঁটিতে হানা দিয়ে পুলিশের যৌথ দল গ্রেফতার করে অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িত মহিলা সহ দুই প্রতারক জামাল উদ্দিন এবং নাজমিন সুলতানাকে। তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় সিমকার্ডহীন ৫২টি ভোডাফোনের প্যাকেট, ১০টি ইউবিআই এটিএম কার্ড, দুটি এসবিআই-এর এটিএম কার্ড, চারটি আধার কার্ড, এটিএম সহ ১৬টি ব্যাংক অব বরোদার পাসবুক, ১৮টি সেন্ট্রাল ব্যাংকের এটিএম কার্ড, আটটি এসবিআই পাসবুক, ১৪টি ফিনো পেমেন্টস ব্যাংকের এটিএম কার্ড, একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং মেশিন, একটি জিও ফাইবার ডিভাইস, বিভিন্ন ব্যক্তির অসংখ্য পাসপোর্ট সাইজের ফটো, জমির খাজনা রেকর্ডের একাধিক জেরক্স কপি, নগদ ৫৪,৭০০ টাকা সহ বেশ কিছু আপত্তিকর নথিপত্র।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রতাপ দাস বলেন, পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত আরও ধরপাকড়ের সম্ভাবনা আছে। পাশাপাশি মোবাইল নম্বর পোর্ট করার ক্ষেত্রে জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রতাপ দাস।

Show More

Related Articles

Back to top button