সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির স্মরণসভা করিমগঞ্জে

করিমগঞ্জে সি পি আই (এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির স্মরণসভায় উগ্র হিন্দু ফ্যাসিবাদ ও কর্পোরেট অশুভ গাঁটবন্ধনকে পরাস্ত করার ডাক
প্রখ্যাত মার্কসবাদী নেতা, সি পি আই (এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে স্মরণ করলো সি পি আই (এম) করিমগঞ্জ জিলা কমিটি। আজ ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২ইং পার্টির করিমগঞ্জ জিলা কমিটির অফিস শহিদ ভবনের প্রভাংশু দত্ত মেমোরিয়াল হলে পার্টি সভ্য, সমর্থক, দরদী ও স্থানীয় বিশিষ্ট উপস্থিতিতে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সি পি আই (এম) করিমগঞ্জ জিলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তরুন গুহ। সীতারাম ইয়েচুরির ছবিতে মাল্যদান করেন জিলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অরুণ দত্ত।
উপস্থিত সকলে প্রয়াত সীতারাম ইয়েচুরির ছবিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সভাপতি তরুন গুহ শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করার পর প্রয়াত নেতার স্মৃতিতে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়।আজকের স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন সি পি আই (এম) আসাম রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য নির্মল দে,করিমগঞ্জ জিলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ব্যোমকেশ ভট্টাচার্য, কালিপদ নাথ, জিলা কমিটি সদস্য অধ্যাপক সঞ্জেন্দু নাথ,বিশিষ্ট নাগরিক করিমগঞ্জ কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. নির্মল সরকার,সুনীত রঞ্জন দত্ত,সুপ্রিয় দেব৷
ব্যোমকেশ ভট্টাচার্য তার বক্তব্যে বলেন সীতারাম ইয়েচুরির প্রয়াণে দেশ বিজেপি বিরোধী আন্দোলনের এক প্রকৃত অভিবাবককে হারালো। সীতারাম ইয়েচুরি ছিলেন মেধাবী ছাত্র। কেন্দ্রীয় শিক্ষা বোর্ডের অধীন সিনিয়র সেকেণ্ডারী পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তারপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষাগুলিতে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পেশা হিসাবে কমিউনিষ্ট রাজনীতিকে বেছে নেন। একজন দক্ষ কমিউনিষ্ট তাত্ত্বিক, সংগঠকের পাশাপাশি তিনি ছিলেন দেশের বাইরের বিভিন্ন কমিউনিষ্ট পার্টির কাছে সমাদৃত। খুব স্বল্পকালীন সময়ের মধ্যেই একজন দক্ষ সাংসদ হিসাবে নিজেকে জাত চেনাতে পেরেছিলেন।অন্যবক্তা কালিপদ নাথ বলেন সীতারাম ইয়েচুরি শুধু পার্টি নেতা ছিলেন না। ভারতবর্ষের জাতীয় রাজনীতিতে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আন্তর্জাতিক কমিউনিষ্ট মঞ্চেও ছিলেন সম্মানীয়। নিজেকে একজন আদর্শ কমিউনিষ্ট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার সময় ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ, জ্যোতি বসু, হরকিষাণ সিং সুরজিত, বি টি রণদিভে, এম বাসবপুন্নাইয়ার মত নেতাদের সাহচার্য পেয়েছিলেন। ছিলেন দক্ষ বক্তা, ক্ষুরধার লেখক। বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলিকে একমঞ্চে আনতে তাঁর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। ভারতবর্ষের মাটিতে সময়োপযোগী মার্কসবাদের বাস্তব প্রয়োগে ছিল অসীম দক্ষতা। এহেনো নেতার প্রয়াণে সি পি আই (এম) এর অপূরণীয় ক্ষতির সঙ্গে উগ্র হিন্দুত্ববাদের উত্থান ও বৃহৎ কর্পোরেট শক্তির সঙ্গে গাঁটবন্ধনের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা, শ্রমজীবী মানুষ শ্রমিক,কৃষকের অধিকার রক্ষার আন্দোলন একজন প্রথম সারির অভিবাবককে হারালো, সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক কমিউনিষ্ট আন্দোলন একজন তাত্ত্বিক ও মার্কসবাদের দক্ষ প্রায়গিক নেতাকে হারালো।
অধ্যাপক সঞ্জেন্দু নাথ বলেন দেশ এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলরা দেশের ক্ষমতায়। উগ্র হিন্দুত্ববাদ ও বৃহৎ কর্পোরেটদের যোগসাজোসে একদিকে দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতার উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে অন্যদিকে শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের অধিকার পদদলিত করা হচ্ছে। চলছে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর আক্রমণ উপরদেশে বেকারী,ক্ষুধা বাড়ছে। দেশের অর্থনীতি তলানিতে ঠেকছে। একজন দৃঢ়চেতা কমিউনিষ্ট হিসাবে সীতারাম ইয়েচুরি তার বিরুদ্ধে প্রতিমুহূর্তে সংগ্রাম করে গেছেন। দেশের শুভ শক্তিগুলিকে নিয়ে উগ্র দক্ষিণপন্থার বিরুদ্ধে বৃহত্তর ফ্রণ্ট তৈরী করতে কাজ করে গেছেন।এই সময়ে ভারতবর্ষের মাটিতে মার্কসবাদের বাস্তব প্রয়োগে দক্ষতা দেখিয়েছেন। তাঁর দেখানো পথে চলাই হবে তাঁর প্রতি সঠিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন।
নির্মল দে বলেন কম: সীতারাম ইয়েচুরি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই একজন পেশাধারী মার্কসবাদী। মার্কসবাদের তত্ত্বগুলিকে বাস্তবের মাটিতে সঠিক প্রয়োগের দক্ষতা ছিলো অসীম। পার্টির কর্মসূচীকে দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়িত করেছিলেন। ভারতবর্ষ এখন গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি। উগ্র হিন্দু ফ্যাসিবাদের উত্থানের বিপদকে মোকাবিলা করতে বৃহত্তর গগণতান্ত্রিক ফ্রণ্ট গঠনের অপরিহার্যতাকে তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন একজন পেশাধারী মার্কসবাদী বিপ্লবী হিসাবে তিনি এই কাজ সুনিপুণ ভাবে করে গেছেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছে ছিলেন গ্রহণযোগ্য। ভারতবর্ষের বিজেপি বিরোধী ঐক্যের তিনি ছিলেন একজন নিপুণ সংযোজক।
এছাড়া উপস্থিত বিশিষ্টদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড.নির্মল সরকার, সমাজকর্মী সুনীত রঞ্জন দত্ত, প্রাক্তন বেঙ্ক কর্মচারী সুপ্রিয় দেব। সভাপতির ভাষনে তরুন গুহ দেশের কোটি কোটি শ্রমজীবী ও গণতান্ত্রিক মানুষের আন্দোলনের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন কম: সীতারাম ইয়েচুরি। উগ্র হিন্দু ফ্যাসিবাদ ও বৃহৎ কর্পোরেট শক্তির আধিপত্যের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলাই হোক কম: সীতারাম ইয়েচুরির প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।