Barak Valley

ডিলিমিটেশনের বিরুদ্ধে ৩০জুন বরাক বনধের ডাক দিল বিডিএফ

শিলচর : সমস্ত সহযোগী দল সংগঠন ও জনগণকে সমর্থনের আহ্বান প্রদীপ দত্তরায়ের। ডিলিমিটেশনে বরাক বঞ্চনার পরিপ্রেক্ষিতে বরাক বিজেপির নেতারা গতকাল অসমের শিলচরে একটি সভায় মিলিত হয়ে যৌথ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি সমগ্র ঘটনাক্রম নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়।

আজ সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রদীপ বাবু বলেন যে তাঁরা গতকালই বলেছিলেন যে এই ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে বরাক তথা রাজ্যের বাঙালিদের নিঃশেষ করার চক্রান্ত চলছে এবং এতে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে বাঙালিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একই কথা উঠে এসেছে বিজেপি নেতাদের মুখে। তিনি বলেন অসমের বরাক তথা বাঙালিদের স্বার্থে এখন সবার একজোট হবার সময় এসেছে। বিজেপির স্থানীয় নেতারা যে এটি অনুধাবন করেছেন এবং এগিয়ে এসেছেন এটি শুভলক্ষণ।

প্রদীপবাবু বলেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট গত তিন বছর ধরে বরাকের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে বরাক বঞ্চনা করা হয়েছে। বরাকের ভাষা আইন রক্ষার দাবিতে আন্দোলনের জন্য তাঁকে জেলে পাঠানো হয়েছে। অসমের বরাকের ছেলেমেয়েদের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বঞ্চনা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও রেলদপ্তরের অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও ভাষা শহিদ স্টেশন নামকরণ ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু এতদিন বরাক বিজেপির নেতারা এসব নিয়ে সম্পুর্ন নীরব থেকেছেন। তিনি বলেন বরাকের ভোটারদের প্রতি দায়বদ্ধতা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রাথমিকতা হওয়া উচিত। তবে সবকিছুর পরও তিনি তাঁদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন যে বিলম্বে হলেও অবশেষে তাঁদের বোধহয় হয়েছে।

তবে তিনি বলেন যে শুধু প্রতিবাদ করলেই চলবে না। তিনি বলেন এই ব্যাপারে বরাকের উজ্জ্বল ঐতিহ্য রয়েছে। ১৯৬১ এর ভাষা আন্দোলনের পর তত্‍কালীন বিধায়ক মহীতোষ পুরকায়স্থ আসাম বিধানসভায় বরাকের স্বার্থে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন,যার জন্য তাঁকে বিধানসভা থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। তত্‍কালীন বিধায়ক নন্দ কুমার সিংহ এর প্রতিবাদে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন বরাকের বিধায়করা সেই ঐতিহ্যের অনুসারী হয়ে এই ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে একযোগে পদত্যাগ করুন। তিনি বলেন যে তাঁরা নিশ্চিন্ত থাকুন যে তাঁদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হবেনা। কিন্তু তাঁতে সরকারের উপর যথাযথ চাপ সৃষ্টি হবে এবং বরাকের ভোটারদের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা পালিত হবে। তিনি আরো বলেন যে তাঁরা আশাবাদী যে বরাকের বাকি সমস্ত জ্বলন্ত সমস্যা নিয়েও অবিলম্বে বরাক বিজেপি একই ভাবে তাঁরা মুখ খুলবেন এবং এসবের সমাধানে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবেন।

প্রদীপ দত্তরায় এদিন বলেন যে তাঁদের উপর জনগনের প্রভুত চাপ রয়েছে এমনকি বিজেপির নেতা কর্মীরাও তাঁদের অবিলম্বে প্রতিবাদী কর্মসূচি ঘোষণা করার জন্য আবেদন জানাচ্ছেন। তিনি বলেন ২৬ জুনের যৌথ সভায় এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবার কথা ছিল। কিন্তু এতো চাপের মুখে পড়ে তিনি ২৬ শে জুনের সভার আহ্বায়ক আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্যের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। এবং সবদিক খতিয়ে দেখে তিনি তাই আজকের সাংবাদিক সম্মেলনেই ঘোষণা করছেন যে ডিলিমিটেশন করে বরাক তথা বাঙালিদের রাজনৈতিক ক্ষমতা কেড়ে নেবার প্রতিবাদে আগামী ৩০ জুন, শুক্রবার, তিনি সকাল পাঁচটা থেকে বিকেল পাঁচটা অবধি সারা বরাক উপত্যকা ব্যাপী সর্বাত্মক বনধের ডাক দিচ্ছেন।

তিনি বলেন যে তাঁরা আশাবাদী যে বরাকের সমস্ত দল, সংগঠন ও আপামর জনসাধারণ এই বনধ কর্মসূচিকে সম্পুর্ন সমর্থন করবেন ও সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমে এই কর্মসূচিকে সফল করবেন।

বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে সংবাদ মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন যে এই ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে খিলঞ্জিয়াদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। তিনি এও বলেছেন যে এন আর সি এবং আসাম চুক্তি করে যে লক্ষ্য পূরণ হয়নি তা নাকি এবার ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে পূরণ হবে। জয়দীপ বলেন যে প্রথম কথা আসামে কারা খিলঞ্জিয়া সেই সংজ্ঞাই নির্ধারণ করতে পারেনি সরকার। দ্বিতীয়ত মুখ্যমন্ত্রী একটি সাংবিধানিক পদ এবং সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যের সমস্ত জাতি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের শপথ নিয়েছেন তিনি।

কিন্তু এই ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী কিছু জনগোষ্ঠীর প্রতি যে ঘৃনা উগড়ে দিচ্ছেন তা দুর্ভাগ্যজনক এবং অসাংবিধানিক। জয়দীপ এদিন আরো বলেন যে আগামী ১৪ জুলাই এর মধ্যে নির্বাচন আয়োগে তাঁরা অবশ্যই আপত্তি পত্র পেশ করবেন তবে যেহেতু সাধারণ জনগন এই ধরনের আপত্তি জানাতে পারবেন না তাই তাদের চাপ ও ক্ষোভ সরকারের কাছে পৌঁছে দেবার উদ্দেশ্যেই এই বনধ ডাকা হয়েছে।

বিডিএফ মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে।


Show More

Related Articles

Back to top button