করিমগঞ্জের পাথারকান্দিতে বন্ধুর গাড়ির ধাক্কায় হত পথচারী বন্ধু, আহত দুই, শোকাহত গোটা এলাকা

পাথারকান্দি : রবিবার দীপাবলির রাতে ভয়ংকর যান দুর্ঘটনায় বন্ধুর গাড়ির ধাক্বায় মৃত্যুবরণ করেছে আরেক বন্ধু। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই যুবক। হতাহত সকলের বয়স ২৫ থেকে ২৭-এর মধ্যে। মর্মান্তিক এ ঘটনায় শোকে মুহ্যমান গোটা পাথারকান্দি। নিহত যুবককে পাথারকান্দি শহরে অবস্থিত মডেল লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী তথা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সর্বজনপরিচিত ভাস্কর দাসের ছেলে স্রষ্ট ভাৰ্গব (ভার্গব দাস) বলে পরিচয় পাওয়া গেছে।
ঘটনার বিবরণ প্রকাশ, রবিবার মধ্য রাতে স্রষ্ট ভাৰ্গব, গৌরব পাল, অযন দেরা আরও কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে পায়ে হেঁটে পাথারকান্দির মুণ্ডমালায় অবস্থিত শ্মশান কালীবাড়ির পূজা দর্শন করে ৮ নম্বর জতীয় সড়কের পাশ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময় তীব্র গতিতে লোয়াইরপোয়া থেকে আই-১০ মডেলের চার চাকার গাড়িতে চড়ে পাথারকান্দিতে ফিরছিলেন স্থানীয় আরেক ব্যবসায়ী পরিতোষ বণিকের ছেলে নবীন বণিক।
নবীনের দুরন্ত গাড়িটি মুণ্ডমালা ময়দান লাগোয়া একটি কালভার্টের ওপর এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশ দিয়ে গৃহগামী পথচারী বন্ধুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে গাড়ির অতর্কিত প্রচণ্ড ধাক্কায় ভাৰ্গব, গৌরব, অয়ন দে-রা ছিটকে কালভার্টের রেলিং ভেঙে পাশে নালায় গিয়ে ছিটকে পড়েন। গাড়ির ভিতরে আবদ্ধ হয়ে পড়েন নবীন বণিক। দরজার কাঁচ ভেঙে তাকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
এদিকে চার চাকার গাড়ি মুখ থুবড়ে কালভার্টের রেলিঙের ওপর ঝুলে পড়ে। রেলিংও ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। রাতেই এসকেভেটরের সাহায্য কালভার্টের রেলিঙের ওপর থেকে আই-১০ কারকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।
কালীপুজোর রাতে শহর সংলগ্ন জাতীয় সড়কে তখন আরও পুজো দর্শনার্থী ছিলেন। তাঁরা অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশের দল গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করে প্রায় ১০০ মিটার দূরে নালা থেকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত সংজ্ঞাহীন স্রষ্ট ভাৰ্গব, রিণ্টু দের ছেলে অয়ন দে এবং গৌরব পালকে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে পাথারকান্দি হাসপাতালে নিয়ে যায়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার ভার্গবকে মৃত বলে ঘোষণা করে ঠিকাদার গৌরাঙ্গ পালের ছেলে গৌরব পাল, অয়ন দে ও নবীন বণিককে করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে রেফার করেন। তবে অয়ন দে সামান্য ঘায়েল হওয়ায় প্রাথমিক চিকিত্সা করে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গৌরব ও নবীনের শারীরিক অবস্থা সংকটজনক বলে উন্নত চিকিত্সার জন্য উভয়কে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছেন করিমগঞ্জের চিকিত্সকরা।
এদিকে নিহত ভার্গব দাসের মৃতদেহ ময়না তদন্তের পর আজ সোমবার তাঁর অভিভাবকদের হাতে সমঝে দিয়েছে। জানা গেছে, আজই মুণ্ডমালা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
উল্লেখ্য, হতাহত যুবকদের বাড়ি পাথারকান্দি শহরেই। তাঁরা পরস্পর পরস্পরের ভালো বন্ধু ছিলেন। ভাৰ্গব ভালো ফুটবল খেলোয়াড় ছিল। শৈশবে সে করিমগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশনের আবাসিক ছাত্র ছিল। গতকাল কালীপুজো উপলক্ষ্যে সে উপবাস ব্রত পালন করছিল। তাঁর অকালমৃত্যুতে গোটা পাথারকান্দি এলাকায় শোক বিরাজ করছে। জানা গেছে, দুর্ঘটনায় নিহত ভার্গব নাট্যকর্মী, নারী সংগঠক গীতা দাসের নাতি। জন্মের পর গীতা দাসেই তাঁর নামাকরণ করেছিলেন, স্রষ্ট ভার্গব নামে। বার্ধক্যজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত প্ৰায় কোমাচ্ছন্ন গীতা দাসও শয্যাশায়ী।