অগ্নিগর্ভ মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেখা মাত্র গুলির আদেশ রাজ্যপালের

ইমফল, ৪ মে : অগ্নিগর্ভ মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ জারি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার মণিপুরের রাজ্যপাল সুশ্রী অনুসুইয়া উকি এই আদেশ জারি করেছেন। সিআরপিসি ১৯৭৩-এর অধীনে মণিপুরের স্বরাষ্ট্র দফতরের কমিশনার টি রঞ্জিত সিং রাজ্যপালের পক্ষে এই আদেশ জারি করেছেন।
প্রসঙ্গত, মণিপুর রীতিমতো জ্বলছে। হিংসাজর্জর আটটি জেলায় সেনা বাহিনী নামানো হয়েছে। খবরে প্রকাশ, গতকাল রাতে সংগঠিত সহিংসতায় ১১ জন সাধারণ মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি কাংপোকপি জেলার সাইকুলে নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে মারা গেছেন দুই আন্দোলনকারী। এ ঘটনার পর আগুনের ওপর ঘি পড়ার অবস্থা হয়েছে রাজ্যে। হিংসাজৰ্জর এলাকায় ফ্ল্যাগমার্চ করছে সেনাবাহিনী। এছাড়া সহিংসতার শিকার চার হাজারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা এখন সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে রয়েছেন।
এদিকে, মণিপুরের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং রাজ্যবাসীর কাছে শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ইমফল, বিষ্ণুপুর এবং মোরেহ জেলায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা অনভিপ্রেত। এ ধরনের হিংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট বিক্ষোভকারীদের কাছেও আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গতকাল বিকেলে ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, মণিপুর’ (এটিএসইউএম) আহূত সংহতি মিছিলের পর পাহাড়ি জেলা বিষ্ণুপুর, ফেরজাওল, জিরিবাম, পশ্চিম ইমফল, থউবাল, টেংনোপাল, কাকচিং এবং কাংপোকপিতে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়েছে। ফলে রাতেই মণিপুরের আট জেলায় সিআরপিসির ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ওই সব জেলাগুলিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকলে আজ সকালে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন বলবত্ করা হয়েছে। নামানো হয়েছে ভারতীয় সেনা বাহিনী। জানা গেছে, উপদ্রুত এলাকাগুলিতে সেনা জওয়ানরা ফ্ল্যাগমার্চ করছেন।
প্রসঙ্গত, মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফশিলি উপজাতি (এসটি) তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য মণিপুর সরকারকে এক নির্দেশ দিয়েছে। এরই প্রতিবাদে ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, মণিপুর’-এর উদ্যোগে গতকাল বিকেলে মণিপুরের কয়েকটি উপজাতি সংগঠন ‘সংহতি মিছিল’-এর আয়োজন করেছিল। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা মণিপুরের বুংমুয়ালে বন বিভাগের বিট অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কয়েক জায়গায় টায়ার পোড়ানোর মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনা সংগঠিত করেছে। কেবল তা-ই নয়, বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি বাড়ি এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগও করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অ্যাকশনে নামে নিরাপত্তা বাহিনী। তখন তাঁদের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় বিক্ষোভকারীরা। তাতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মণিপুরের পরিস্থিতি ক্রমশ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠায় আজ রাজ্যপাল আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দেখা মাত্রই গুলির আদেশ জারি করেছেন। সিআরপিসি ১৯৭৩-এর অধীনে রাজ্যপালের পক্ষে এই আদেশে মণিপুরের স্বরাষ্ট্র দফতরের কমিশনার টি রঞ্জিত সিং লিখেছেন, গত ৩ মে আহূত সংহতি মিছিলে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। তাতে রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটেছে। তাই, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য রাজ্যপাল সমস্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসক এবং এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট/স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেটদের দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরোধ, সতর্কবার্তা এবং পরিমিত শক্তি প্রদর্শন সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে প্রশাসনিক আধিকারিকদের এই আদেশ কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।