Barak Valley

১২ ঘণ্টার বরাক বনধ-এর ব্যাপক প্রভাব করিমগঞ্জে, বিধায়ক কমলাক্ষ সহ গ্রেফতার দু-শতাধিক পিকেটার

করিমগঞ্জ : অসমের সংসদীয় ও বিধানসভা এলাকার ডিলিমিটেশন খসড়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধাচরণ করে বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (বিডিএফ), কংগ্রেস, এআইইউডিএফ সহ অন্য বিরোধী দল ও বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠন আহূত ১২ ঘণ্টার বরাক বনধ-এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল করিমগঞ্জ সদর শহর সহ জেলা।

তবে বনধকে বানচাল করতে সকাল থেকে অতি সক্রিয় ছিল করিমগঞ্জ পুলিশ। কড়া মেজাজে ছিলেন সদর ডিএসপি গীতার্থ দেবশর্মা ও তাঁর বাহিনী। অন্যদিকে বনধ সফল করতে এদিন কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছিল জেলা কংগ্রেস থেকে শুরু করে যুব কংগ্রেস, সেবা দল এবং ছাত্র সংগঠন এনএসইউআই।

বনধ-এর দিন আজ শহরের স্থানে স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন এআইইউডিএফ, এসইউসিআই (কমিউনিস্ট), সিপিআই, আম আদমি পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরাও। সকাল নয়টায় যুব কংগ্রেস কর্মীরা করিমগঞ্জ কলেজের গেটের সামনে অবস্থান গড়ে তুললে প্রথমেই তাঁদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় সদর থানায়। বেলা সাড়ে দশটায় জেলাশাসক কার্যালয়ের প্রবেশদ্বারে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করার সময় আটক করা হয় অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির উপ-সভাপতি তথা উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, জেলা কংগ্রেস সভাপতি রজত চক্রবর্তী, এআইইউডিএফ নেতা আব্দুল হেকিম চৌধুরী সহ শতাধিক বনধ সমর্থকদের।

আটক হওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে টানা-হ্যাঁচড়া করতে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন বিধায়ক কমলাক্ষ। ডান হাতের পাশাপাশি বাঁ পায়ে চোট লাগায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে ভরতি করা হয় করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে। সেখানে পায়ের এক্স-রে ও ব্যান্ডেজ করে প্রায় দু ঘণ্টা পর নিয়ে আসা হয় সদর থানায়।

অফিসপাড়ার ধরনা শেডে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এসইউসিআই (কমিউনিস্ট)-এর নেতা-কর্মীরা। লাল পতাকা হাতে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগানে শহরে মিছিলও করেন তাঁরা। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে দু শতাধিকের বেশি পিকেটারকে আটক করে রাখা হয় শহরের পাবলিক হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে। বিকেল পাঁচটার পর অবশ্য বিনা শর্তে তাঁদের মুক্ত করে দেওয়া হয়।

জেলাশাসক কার্যালয় ছাড়া বাকি সব সরকারি কার্যালয়েই এদিন পিকেটাররা কর্মচারীদের প্রবেশ করতে দেননি। বন্ধ ছিল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শুনশান ছিল রাজপথ। তবে সকাল নয়টার পরিবর্তে দশটা থেকে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ফোর্থ সেমিস্টারের ইংরেজি এবং সিক্সথ সেমিস্টারের ইকোনমিক্স পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশিরভাগ কলেজে কম থাকার দরুন অনুষ্ঠিত পরীক্ষা বাতিলের দাবি উঠেছে।

এদিকে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগে বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, অগণতান্ত্রিক এই ডিলিমিটেশন খসড়া প্রস্তাব কোনও ভাবে মানা যাবে না। কোন স্বার্থে বরাক উপত্যকা থেকে দুটি বিধানসভা কেন্দ্র বাদ দেওয়া হয়েছে তার প্রশ্ন তুলেন তিনি। বলেন, আসলে নির্বাচন কমিশন খসড়া প্রকাশ করলেও এ সবের পিছনে রয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাত। কোনও ধরনের আলোচনা না করে তৈরি করা হয়েছে খসড়া। বিধায়ক বলেন, মানুষ এই বনধকে সমর্থন জানিয়ে সফল করতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছেন। গোটা বরাক জুড়ে সফল হয়েছে আজকের ১২ ঘণ্টার বনধ। নির্বাচন কমিশন তাঁদের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার না করলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে তাঁদের, জানান বিধায়ক কমলাক্ষ।

বাম যুব নেতা সুজিত্‍ কুমার পাল বলেন, বরাক উপত্যকার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভার আসন হ্রাস এবং ভৌগোলিক সামঞ্জস্যহীন এলাকাকে নিয়ে বিধানসভার সীমা পুনর্নির্ধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দল সকাল পাঁচটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বরাক উপত্যকাব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল পালন করার ডাক দেয়। অযৌক্তিক ও বেআইনিভাবে বিভাজনবাদী মানসিকতা নিয়ে তৈরিকৃত অসমের বিধানসভা ও লোকসভা আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবিতে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট)-এর করিমগঞ্জ জেলার কর্মী সংগঠক, সমর্থক ১২ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল করেছেন।

প্রকাশিত খসড়ায় বরাক উপত্যকার দুটি বিধানসভা সমষ্টি রহস্যজনকভাবে বিলোপ করা হয়েছে এবং সমগ্র বরাক উপত্যকার, বিশেষ করে করিমগঞ্জ জেলার ভৌগোলিক মানচিত্র তছনছ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সতু রায়।

Show More

Related Articles

Back to top button